আমি বীরাঙ্গনা বলছি – নীলিমা ইব্রাহিম Download

 

বইয়ের নামঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি
লেখকের নামঃ নীলিমা ইব্রাহিম
ক্যাটাগরি: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
ফাইল ফরম্যাট: Pdf (পিডিএফ)
প্রকাশনাঃ জাগৃতি পাবলিকেশন্স
১ম প্রকাশকালঃ ১৯৯৪ সাল
মোট পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৯০ পেজ
বইয়ের মুদ্রিত মূল্যঃ ৪০০৳

আমি বীরাঙ্গনা বলছি - নীলিমা ইব্রাহিম Download


প্রশ্ন: আমি বীরাঙ্গনা বলছি কোন ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর: এটি একটি ডায়েরি, চিঠি ও স্মৃতিচারণ গ্রন্থ যেখানে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।


আমি বীরাঙ্গনা বলছি রিভিউ ও  গ্রন্থের উপজীব্য:

নীলিমা ইব্রাহিম বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী।  তিনি ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কর্মজীবনের অনেকটা সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  অধ্যাপক ছিলেন, দায়িত্ব পালন করেছেন  বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালক হিসেবে। লেখিকার অন্যান্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে- গবেষা শরৎ- প্রতিভা, বেগম রোকেয়া, রমনা পার্কে, যে অরণ্যে আলো নেই, বিশ শতকের মেয়ে ইত্যাদি। সমাজকর্ম ও সাহিত্যে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য বহু পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন।
২০০২ সালের ১৮ জুন বাংলাদেশের এই অনন্য ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান ঘটে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী কর্তৃক ধর্ষিত মোট সাতজন বীরাঙ্গনার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এবং এর পরবর্তী সময়ের এক কালো অধ্যায় “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইটির প্রধান উপজীব্য বিষয়।

“সেদিন আমার চোখের জলে বঙ্গবন্ধুর বুকটা ভিজে গিয়েছিল, বলেছিলেন- “তোরা আমার মা, জীবনের শ্রেষ্ঠ ধন স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গ করেছিস। আমি আছি, তোদের চিন্তা কী?” সত্যিই সেদিন মনে হয়েছিল, আমাদের বঙ্গবন্ধু আছেন, আমাদের চিন্তা কী?”

একজন বীরাঙ্গনার কন্ঠের এ কথাটা  যতটা সত্য আর গর্বের নিচের কথাটা ঠিক ততটা নির্মম আর লজ্জার, যে স্বাধীনতার পর দেশের মাটিতে ঠাঁই হয়নি বলে দেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে!
“আমার যা ছিল গর্বের, আমার পরিবার আর সমাজের তাই ছিল সর্বাধিক লজ্জা, ভয় আর ঘৃণার। এ জীবনে সব পেয়েছি, কিন্তু মাটি হারিয়েছি।”

এখানে সাতজন নারীর, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হওয়ার নির্মম গল্প ওঠে এসেছে! কী অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমাদের নারীরা, কত প্রাণ ঝরে গেছে যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে! এই নির্মম কাহিনী বইয়ের পরতে পরতে ওঠে এসেছে।
একই রুমে একসাথে আমাদের বোনেরা গনধর্ষনে শিকার হয়েছে, কখনো আবার বাবার সামনে মেয়ে, কখনো মা মেয়ে একসাথে; এ যেন মানুষের পশুত্ব! খাবার বলতে রুটি ডাল, কেউ পরিধানের জন্য লুঙ্গি, গেঞ্জি পেত আবার কারোর ভাগ্যে সেটাও জুটেনি! অন্ধকার একটা রুমে ৮/১০ জনের দিন কেটেছে, ৬/৭ মাসের বন্দী জীবন, কেউবা পুরো ৯ মাসই এই নির্মম শারীরিক আর মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়।আবার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেলে নিশ্চিত মৃত্যু!
এই অত্যাচার কেবল পাকিস্তানীরাই করে যায় নি, স্বাধীনতার পরেও আমাদের সমাজ ক্ষান্ত হয় নি! দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে আমাদের গৌরব, আমাদের বিজয়ের বড় অংশ বীরাঙ্গনাদের হৃদয়টাকে।

আমরা ৩০ লক্ষ শহীদের ইতিহাস জানি, গর্বিত হই। জানি না এই ২ লক্ষ নারীত্বের ইতিহাস, জানতেও চাই না, উল্টা প্রশ্ন ওঠাই তাদের সতীত্ব নিয়ে। কী নির্মম আমাদের সমাজব্যবস্থা, কী বিকৃত আমাদের মনুষ্যত্ব!
আমাদের নির্যাতন সইতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়েছে কতো বীরাঙ্গনা তার হিসাব কে রাখে?
বিষ নামের কিছু খেয়ে কতজন যে কলিজাটা ছারখার করে দিয়েছে, সেটাও আমরা জানি না! আমরা জানি না, কত নারী এই স্বাধীন দেশের মাটি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, চলে গেছে পাকিস্তানে! হ্যাঁ, পাকিস্তানে, এই বর্বরদের সাথে!
এর বাইরে স্বস্তির জায়গা, সমাজের দেওয়া কলঙ্ক মাথায় নিয়ে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও অনেক বীরাঙ্গনাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে, মাথা উঁচু করে বাঁচার যোগ্যতা অর্জন করেছে।

আমরা ভুলে যাই, নারী কারোর মা, কারোর স্ত্রী কারোর স্নেহের ছোট বোন।  আর এই  নারীদের রক্ষা করার দায়িত্ব পুরুষের, মুক্তিযুদ্ধচলাকীন সময়ে যখন পুরুষ এতে ব্যর্থ হলো আমাদের নারীরা হয়ে গেলো বীরাঙ্গনা!
দোষটা কার?
স্বাধীনতার এতো বছর পরেও আমরা বীরাঙ্গনাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে অপরাগ!
এক বীরাঙ্গনার আক্ষেপ-
” আমার শ্রেষ্ঠ সম্পদ নারীত্ব আমার দেশের জন্য উৎসর্গ করেছি, তবুও কোন মিনারে আমার নাম খোদাই করেনি। সম্ভবত লজ্জায়”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম অধ্যায় এই বীরাঙ্গনা। লেখকের ভাষ্যমতে, বীরাঙ্গনাদের নিয়ে লিখতে নিয়ে ওনার হৃদয় ও মস্তিষ্কের ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি হয়; একজন পাঠক হিসেবে বলতে হয়, বীরাঙ্গনাদের জীবনকাহিনী পড়তে নিয়ে আমি শিউরে ওঠেছি, কষ্টে যেন বুকটা ভেঙে গেছে বারবার।
বীরাঙ্গনাদের জবানীতে কয়েকটা ঘটনা পড়তে নিয়ে আমি ঠুকরে ঠুকরে কেঁদেছি!  কী নির্মম!  কী যন্ত্রনার! এতো তীব্র অনুভূতি,  তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা অনুভব করেছি যে  শ্রদ্ধেয় বীরাঙ্গনাদের নিয়ে আনাড়ি হাতে নিজে একটা কবিতা লিখে ফেলেছিলাম; “আমি এক বীরাঙ্গনা” নামে!

এই স্বাধীন বাংলার নাগরিক হিসেবে এই বইটা পড়া কর্তব্য বলবো আমি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এই অংশটার ইতিহাস এখনো আমাদের অগোচরেই রয়ে গেছে! তাই হয়তো আমাদের মাটিতে ঠাঁই হয়নি বীরাঙ্গনাদের, আমাদের পতাকার অংশীদারিত্ব থেকে বঞ্চিত করেছি তাঁদের!
হে শ্রদ্ধেয় বীরাঙ্গনা,  আমরা অধম বাঙালি, আমাদের ক্ষমা করো মা,আমাদের ক্ষমা করো বোন।

এক বীরাঙ্গনার তীব্র যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ-
“আপা আমি একজন বীরাঙ্গনা। কিন্ত আপনাদের দেওয়া পরিচয় অঙ্গের ভূষণ হয়েই রইলো, তাকে না পারলাম পরতে, না পারলাম ফেলতে। লোকচক্ষে হয়ে গেলাম বারাঙ্গনা!”

Ami birangona bolchi by nilima ibrahim pdf free download link: Click here


Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *