দ্বীনের পথে আসা অনেক কঠিন। কিন্তু তার চাইতে বেশি কঠিন আমৃত্যু এই পথে হেটে চলা!
১) যে মেয়েটা এককালে ফটোগ্রাফার হওয়ার স্বপ্ন বুনতো, ক্যামেরার মেমরিসহ পরিবারের সবার ফোনের স্টোরেজ ফুল করে রাখতো, সেই মেয়েটা আজ আর জানেই না স্মার্টফোনের স্ক্রিনে তাকে কেমন দেখায়…
.
২) যে মেয়েটা এককালে হেডফোন কানে দিয়ে প্রিয় সঙ্গীত শিল্পির কন্ঠে হারিয়ে যেতো, সেই মেয়েটা আজ দিনরাত বই নিয়ে পড়ে থাকে। যেমন তেমন বই না; ইসলামিক বই! দিন যায় রাত গড়ায়, কিন্তু নতুন কোন হিট মিউজিক বের হলে তার একদমই মাথাব্যথা থাকে না।
.
৩) গ্রীষ্মকালে যে মেয়েটা অবাক হয়ে নিক্বাবি বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করতো, “গরম লাগে না তোদের? নিঃশ্বাস নেস কিভাবে?”
সেই মেয়েটি আজ ৪০ ডিগ্রীর কাঠফাটা তাপমাত্রায় নিক্বাব পরে ক্লাস করতে আসে।
.
৪) “ইশ! এই সমাজের মানুষদের কারণে হলিউড-বলিউডের নায়কদের মত করে চলতে পারি না”- বলে যে ছেলেটা আফসোস করতো; ছেড়া জিন্স পরে, চুলে কালার করে যে হেঁটে বেড়াতো, সেই ছেলেটা আজও এলাকায় ঘুরঘুর করে। তবে, সমাজের মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে…. তাও টুপি পাঞ্জাবি পরে!
.
৫) প্রতি সাপ্তা হাজারো টাকা গার্লফ্রেন্ডে পেছনে নষ্ট করা ছেলেটা আজও টাকা খরচ করে, তবে আল্লাহর রাস্তায়।
.
.
গল্প এখানেই শেষ নয়! আরো আছে….
.
১) সালোয়ার-কামিজ পরা মেয়েদের দিকে যে বোরকাওয়ালি এককালে বাঁকা চোখে তাকাতো, সে আজ হাটে-মাঠে-ঘাঠে বোরকা ছাড়াই দিব্যি হেটে চলতে পারে।
.
২) যে মহিলা একসময় নিক্বাব সচেতন ছিলো, তিনি এখন নন-মাহরাম কলিগদের সামনে নিক্বাব খুলে কোন ধরণের হ্যাজিটেশান ছাড়াই কথাবার্তা বলতে পারে।
.
৩) ক্লাসের কোন এক ছেলের কাছে তার ছবি আছে শুনে কান্নায় লাল হয়ে যাওয়া মেয়েটা আজ ছেলেদের সাথে সেলফি তোলে। সেই ছবি ফেইবুক, ইস্টাগ্রামের মধ্যমে শতশত অন্য আরো গায়ের মাহরাম দের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। মেয়েটির কোন কষ্টই লাগে না!
.
৪) যে যুবকটা জীবনে কখনো গালে ব্লেড লাগায়নি, সে সামান্য একটা পাসপোর্টের জন্যে দাড়ি কেটে আজ ক্লিন সেইভড হয়ে পাড়ি দিয়েছে পশ্চিমা রাষ্ট্রে ক্যারিয়ার বিল্ড-আপ করতে…
.
৫) যে ছেলেটাকে ঝড়, বৃষ্টি, শীত কিংবা গরমের তীব্রতা কিছুই আটকাতে পারতো না মাসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করা হতে; সেই ছেলের কানে কেন জানি আজ আযানের ধ্বনি পৌছায় না।
.
৬) যে ছেলেটা এককালে বিষন্নতার ঔষধ হিসেবে নামাজ, যিকির, কুর’আন তিলাওয়াত আর রোজা কে বেছে নিতো, সে আজকাল ডিপ্রেশনে গেলে সিগারেটের ফুঁকে কিংবা পতিতালয় রাত কাটায়।
.
.
প্রথম পাঁচটি ঘটনার মত শতশত গল্প জেনে থাকি আমরা। অনুপ্রেরণা নেই এর থেকে। তবে, দিন শেষে আমরা সবাই বাস্তবাতর মুখাপেক্ষী! বাস্তবতার কিছু ভিন্ন চিত্রও থাকে। অপ্রিয় চিত্র। অপছন্দনীয় চিত্র।
.
মাঝে মাঝে ঢুঁ মারি কিছু আইডিতে। হায়! এ কি বেহাল দশা আইডিগুলার! যত স্ক্রল করি চোখজোড়া ততই ভারি হতে থাকে। তাদের এমন অবনতি দেখতে আর কক্ষনো আসবো না বলে ক্লিক করি ব্যাক বাটনে।
.
দ্বীনের পথে আসা অনেক কঠিন। কিন্তু তার চাইতে বেশি কঠিন আমৃত্যু এই পথে হেটে চলা। সবাই যেমন এ পথে আসতে পারে না, তেমনি এই পথে এসে গেলে সবাই টিকে থেকে, হাটে পর হতেও পারে না। পথিমধ্যে হারিয়ে যায় অনেকেই। এই হারিয়ে যাওয়াটা হঠাৎ করেই হয়। কেউ হেরে যায় জীবনের কাছে, কেউ বাস্তবতার কাছে, কেউ বা নফসের কাছে!
.
ভয় লাগে। প্রচন্ড ভয় লাগে। এক অজানা হারিয়ে যাওয়ার ভয়। গন্তব্যে পৌছানোর আগেই যদি ছিটকে যাই!! এর চাইতে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে!!!
.
.
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻻَ ﺗُﺰِﻍْ ﻗُﻠُﻮﺑَﻨَﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﺇِﺫْ ﻫَﺪَﻳْﺘَﻨَﺎ ﻭَﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦ ﻟَّﺪُﻧﻚَ
ﺭَﺣْﻤَﺔً ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻮَﻫَّﺎﺏُ
“হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।”
-(আল ইমরানঃ ৮)
.
.
ﻳَﺎ ﻣُﻘَﻠِّﺐَ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏِ ﺛَﺒِّﺖْ ﻗَﻠْﺒِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺩِﻳﻨِﻚَ
“হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন।”
-(তিরমিজীঃ ৩৫২২)
সংগৃহীত
credit : main autor. this is a copy post. ইসলামিক জ্ঞান সম্প্রসারণের জন্য এই পোস্টটি কপি করে এখানে দেয়া হয়েছে>