দ্রুত বিয়ে হওয়ার কিছু পরীক্ষীত আমল!
👇দ্রুত বিয়ে হওয়ার কিছু পরীক্ষীত আমল। 👇
অনেকেই বলেন হুজুর আমার বিয়ে হয় না এর জন্য কোনো আমল আছে কি, তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট টা তাদের জন্য
১- বিয়ের জন্যে কিছু আমাল আছে।
– যেমন, এস্তেগফার করা। যথাসম্ভব সার্বক্ষণিক এস্তেগফার করা।
.
– তারপর সুরা ফুরকানের ৭৪ নং আয়াতটা পড়তে পারেন।
.
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻦَﺍ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ
.
অনেকে বলেন ফরজ নামাজের পর পড়তে। কারণ হাদিসের ভাষ্যমতে, ফরজ নামাজের পর দুয়া কবুল হয়। আর এটাও একটা দুয়া!! (তিরমিযি -৩৪৯৯ হাসান)
.
– বেশি বেশি দুয়া করা। বিশেষ করে দুয়া কবুলের মুহুর্তগুলো একটাও বাদ দেয়া উচিত না।
.
– আমলের পাশাপাশি হালাল পন্থায় পাত্রের সন্ধান ও চেষ্টা করতে হবে।
.
২- বাংলাদেশের সমাজের যেসব ফেতনা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ‘জাদু/সিহর’ এর চর্চা। এমন অনেককেই দেখা যায়, যাদেরকে জাদু করে আটকে রাখা হয়। বয়স হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব আসছে না। অথবা প্রস্তাব আসলেও অজ্ঞাত কারণে ফিরে যাচ্ছে।
.
এক্ষেত্রে, যারা সহীহভাবে রুকইয়া করেন তাদের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। পাশাপাশি নিজেও বিভিন্ন রুকইয়ার আমল করতে পারেন। ভালো হয়, কিছু টাকা সদকা করে দিলে।
.
হাদিসে সদকার অনেক ফাজায়েল বলা হয়েছে। তারমধ্যে একটি হচ্ছে, সদকা দ্বারা বিপদাপদ দূর হয়।
(ইবনে হিব্বান- ৩৩০৯)
.
ইবনুল কাইয়িম রাহ. বলেন, “সদকার আশ্চর্য প্রতিফল রয়েছে। এমনকি সদকা যদি, ফাসেক, জালেম ও কাফের থেকেও হয়।”
.
৩- বিয়ের জন্যে ছেলেকেই আগ বাড়িয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হবে, এমন কোন বিষয় নেই।
.
আমার জানামতে, ৩/৪ জন সাহাবীয়া আছেন, যারা নিজেরাই প্রস্তাব দিয়েছেন। সহীহ বুখারীতে একটা অধ্যায়ই আছে “মেয়ে কতৃক নিজেরাই ছেলেদেরকে বিয়ের প্রস্তাব প্রদান” নামে।
.
ইমাম নববী বলেছেন, কোন নেককার ও আখলাক ওয়ালা ছেলে পেলে তাকে প্রস্তাব দেয়া মুস্তাহাব।
.
যাহোক, মেয়ে নিজে প্রস্তাব দেয়ার চেয়ে ভালো হয়, গার্জিয়ান এর মাধ্যমে প্রস্তাব দেয়া। যদি সে সুযোগ না থাকে, তবে নিজেই প্রস্তাব পেশ করতে পারে। যদি পাত্র দ্বীনদার ও সালেহ হয়।
.
৪- বিয়েতে দেখার বিষয় হচ্ছে, দ্বীনদারী ও আখলাক।
.
এছাড়া স্বচ্ছলতা, পরিবার, সৌন্দর্য অনেকে বিবেচনা করে থাকেন। সেটার সুযোগও আছে। কিন্তু দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
.
কারণ, আমাদের জীবনযাপন এর দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত জান্নাতকে কেন্দ্র করে। অসচ্ছলতা, অসৌন্দর্য এটা কেবল দুনিয়াতেই থাকবে। জান্নাতে গেলে সবাই সুন্দর হয়ে যাবে। সুতরাং এগুলো সাময়িক। মূল দেখার বিষয় দ্বীনদারি।
.
এটাই জান্নাতে কাজে লাগবে। অনেক অর্থের মালিক, দারুন হ্যানসাম দেখে বিয়ে করা হলো, অথচ ঐ ছেলের দ্বীনদারির হালত খুবই নাযুক। দুনিয়াতে স্বচ্ছলতা মিলবে বটে, অনেক শখ ও উইশও পূরণ হবে। কিন্তু আটকে যাবেন আখেরাতে গিয়ে। আল্লাহ বোঝার তাওফিক দিন!
.
৫- স্পেসিফিক পাত্রের সাথে বিয়ে যেন হয়, এভাবে কখনোই দুয়া করা উচিত না। কারণ, তার মধ্যে আপাতদৃশ্যে কল্যাণ রয়েছে মনে হলেও, ভবিষ্যৎ আল্লাহ জানেন। সুতরাং নিজের জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ হয় এমন পাত্রের জন্যে দুয়া করা।
.
তবে এভাবে দুয়া করা যেতে পেরে — “ঐ মানুষটা যদি আমার দুনিয়া ও আখেরাতের জন্যে কল্যাণকর হয়, তাহলে আমাকে পাইয়ে দিও। আর যদি তার মধ্যে কল্যাণ না থাকে, তাহলে আমাকে এমন ব্যক্তি মিলায়ে দাও, যার মধ্যে তুমি আমার জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ রেখেছ।”
।.
৬- এস্তেখারা করা। বিয়েতে অবশ্যই এস্তেখারা করা উচিত।
.
এস্তেখারার নামাজঃ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের আমল
====================.
এস্তেখারা কিঃ
.
এস্তেখারা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
.
এস্তেখারা শব্দটি আরবী। আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ কল্যাণ প্রার্থনা বা কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া।
.
ইসলামী পরিভাষায়ঃ দুরাকাত নামায ও বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর তায়া’লার নিকট পছন্দনীয় বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা। অর্থাৎ, দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দু রাকায়াত সালাত ও এস্তেখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই এস্তেখারা। (ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী)
.
এস্তেখারা কখন করতে হয়ঃ
.
মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দন্ধে পড়ে যায়। কারণ, কোথায় তার কল্যাণ নিহীত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নাই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত হওয়ার জন্য আসমান জমীনের সৃষ্টিকর্তা, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সকল বিষয়ে যার সম্যক জ্ঞান আছে, যার হাতে সকল ভাল-মন্দের চাবী-কাঠি সেই মহান আল্লাহর তায়ালার নিকট উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যেন তিনি তার মনের সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থীর করে দেন যা তার জন্য উপকারী। যার ফলে তাকে পরবর্তীতে আফসোস করতে না হয়। যেমন, বিয়ে, চাকরী, সফর ইত্যাদি সে বিষয়ে এস্তেখারা করতে হয়।
.
চাকুরী, বিবাহ-শাদী, সফরে গমন, বা অন্য কোন বৈধ কাজের পূর্বে এস্তেখারা করলে পরে আর আক্ষেপ করতে হবে না, ইন শা আল্লাহ।
.
ফলাফল কিভাবে পাবোঃ
.
সাধারনতঃ স্বপ্নের মাধ্যমেই ফলাফল বা দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়, বৈধ কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ব্যাপারে। যদি ভালো স্বপ্ন দেখেন, সরাসরি দিক নির্দেশনা পান অথবা ঘুম থেকে উঠার পর মন-মেজাজ অনেক ভালো থাকে বা ফুরফুরে থাকে, তবে আপনার জন্য বিষয়টি মঙ্গলজনক হতে পারে আর যদি এগুলির বিপরীত হয় তবে বিষয়টি অমঙ্গলজনক হতে পারে। (স্বপ্নের ব্যাখ্যা অবশ্যই একজন ‘আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে)
তবে, সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে স্বপ্নই একমাত্র নিয়ামক নয়। স্বপ্ন সবসময় দেখা না-ও যেতে পারে। স্বপ্ন দেখাটা অনেক ক্ষেত্রেই তাক্বওয়া এবং আমলের মজবুতির উপরে নির্ভর করে। অর্থ্যাৎ, আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো থাকলে স্বপ্নের মাধ্যমে একটা দিক-নির্দেশনা পেতে পারেন। নয়তো, বিভিন্নভাবে আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য পেতে পারেন। যেমনঃ কাজটি হাসিলের পথ সহজ হয়ে যাওয়া, কাজটি করার ব্যাপারে মনের মাঝে তাগিদ অনুভব করা ইত্যাদি।
.
এস্তেখারার ধাপঃ
.
শাইখ আব্দুল নাসির জাংদার মতে, এস্তেখারার ধাপ ৩ টি।
.
১) নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।
২) এস্তেশারা বা অভিজ্ঞ মুরুব্বী/অভিভাবকদের সাথে পরামর্শ করা।
৩) এস্তেখারার নামাজ, দু’আ ও প্রার্থনা।
.
এস্তেখারা করার হুকুমঃ
.
এটি সুন্নাত। যা সহীহ বুখারীর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
.
আল্লাহ তায়া’লা বলেন, “আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরমর্শ কর। অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাক)। আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন।“ [ সূরা আলে ইমরান: ১৫৯ ]
.
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেন, “তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে ও সংগোপনে।“ [সূরা আরাফঃ ৫৫]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আদম সন্তানের সৌভাগ্যের বিষয়সমূহ থেকে একটি হল এস্তেখারা করা ও আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা। আর, মানুষের দুর্ভাগ্য হল এস্তেখারা না করা ও আল্লাহর ফয়সালার উপর অসন্তুষ্ট থাকা।“ [আহমাদ ১৩৬৭]
.
এস্তেখারার ব্যাপারে কয়েকজন সাহাবা ও বুজুর্গের মন্তব্যঃ
.
১) উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, “আমার সকালটা আমার কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় না কি অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় হল তা নিয়ে আমি ভাবি না । কারণ, আমি জানি না কল্যাণ কোথায় নিহিত আছে; যা আমি আশা করি তাতে না কি যা আমি আশা করি না তাতে।”
.
২) সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, “আল্লাহর নিকট এস্তেখারা করা আদম সন্তানদের সৌভাগ্যের বিষয়। অনুরূপভাবে আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকাও তাদের সৌভাগ্যের বিষয়। পক্ষান্তরে আল্লাহর নিকট এস্তেখারা না করা আদম সন্তানদের দূর্ভাগ্যের বিষয় অনুরূপ ভাবে আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হওয়াও তাদের দূর্ভাগ্যের বিষয়।”
.
৩) ইমাম নওবী (রহঃ) বলেন, “আল্লাহ তায়ালার নিকট এস্তেখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। কারণ, মানুষের জ্ঞান-গরীমা অপূর্ণ। সৃষ্টিগতভাবে সে দূর্বল। তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কি করবে না করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়।”
.
৪) শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, “সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট এস্তেখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।”
.
৫) কাতাদা (রহঃ) বলেন, “মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরষ্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তওফীক দেন।”
.
এস্তেখারা করার নিয়ম বা পদ্ধতিঃ
.
১) নামাযের ওযুর মত করে ভালোভাবে ওযু করতে হবে।
.
২) এস্তেখারার উদ্দেশ্যে দু’ রাকায়াত নামায পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে সুন্নত হল, প্রথম রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন (কুল আইয়োহাল কাফিরূন) এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস (কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) পড়া। (যদি আপনি এই আশংকা করেন যে, এস্তেখারার নামাজ পড়ে ঘুমালে ঘুম থেকে উঠে আর বেতর পড়ার সুযোগ না-ও পেতে পারেন, তবে আগে বেতর পড়ে নিলে অসুবিধা হবেনা। যেহেতু বেতর ওয়াজিব, নফলের জন্য তো আর সেটা কাযা করা যাবেনা।)
.
৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তা’আলার বড়ত্ব, ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরূদ পেশ করার পর নিম্নোক্ত দুয়াটি পাঠ করা।.
.
এস্তেখারার নামাজের পর দোয়াঃ
.
হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (সাঃ) প্রত্যেক কাজে আমাদের এস্তেখারা করা সম্পর্কে এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার করবে তখন সে দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করবে,
.
এরপর সে পাঠ করবেঃ
.
ﺍَﻟّﻠﻬُﻢَ ﺇِﻧّﻲِ ﺃَﺳْﺘَﺨِﻴْﺮُﻙَ ﺑِﻌِﻠْﻤِﻚَ ﻭَ ﺃَﺳْﺘَﻘْﺪِﺭُﻙَ ﺑِﻘُﺪْﺭَﺗِﻚَ ﻭَﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻚَ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴْﻢِ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺗَﻘْﺪِﺭُ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻗْﺪِﺭُ ﻭَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﻋَﻠَّﺎﻣُﺎﻟْﻐُﻴُﻮْﺏِ ، ﺍَﻟّﻠﻬُﻢَ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺍَﻥَّ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺎَﻣْﺮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟِﻰْ ﻓِﻲْ ﺩِﻳْﻨِﻲْ ﻭَﻣَﻌَﺎﺷِﻰْ ﻭَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺍَﻣْﺮِﻯْ ﻓَﺎﻕْﺩِﺭْﻩُ ﻟِﻲْ ﻭَﻳَﺴِّﺮْﻩُ ﻟِﻲْ ﺛُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟِﻲْ ﻓِﻴْﻪِ ،ﻭَ ﺍِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺍَﻥَّ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺎَﻣْﺮَ ﺷَﺮٌ ﻟِﻰْ ﻓِﻲْ ﺩِﻳْﻨِﻲْ ﻭَﻣَﻌَﺎﺷِﻰْ ﻭَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺍَﻣْﺮِﻯْ ﻓَﺎﺻْﺮِﻓْﻪُ ﻋَﻨِّﻰْ ﻭَﺍﺻْﺮِﻓْﻨِﻰْ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﺍﻗْﺪِﺭْ ﻟِﻰَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَ ﺣَﻴْﺚُ ﻛَﺎﻧَﺜُﻢَّ ﺍَﺭْﺿِﻨِﻰْ ﺑِﻪ
.
-[বুখারী, ২য় খন্ড, হাদিস নং: ২৬৩ ]..
.
দোয়ার মধ্যে যখন ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺎَﻣْﺮَ বলবেন, তখন সেই কাজের কল্পনা করবেন যে কাজের জন্য এস্তেখারা করা হচ্ছে এবং দু’আর শেষেও নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করবেন। (নামাজ আদায়ের পর, মনোযোগের সাথে ৩ বার নিচের এই দোয়া পাঠ করবেন)।
.
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের মাধ্যমে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করি, আপনার শক্তির মাধ্যমে আপনার কাছে শক্তি প্রার্থনা করি এবং আপনার মাহান দয়া প্রার্থনা করি। কেননা আপনি শক্তিমান, আমার কোন শক্তি নাই।
.
আপনি জানেন আমি জানি না। আপনি অদৃশ্যের বিষয় সম্পর্কে সবিশেষ জ্ঞাত। হে আল্লাহ! যদি আপনার জ্ঞানে এ কাজটি আমার ইহকাল ও পরকালের জন্য মঙ্গলজনক হয়, তবে এটি আমার জন্য অবধারিত করুন, অতঃপর এতে বরকত দান করুন। আর যদি আপনার জ্ঞানে এ কাজটি আমার ইহকাল ও পরকালের জন্য অনিষ্টকর হয় তবে এ কাজকে আমা থেকে এবং আমাকে এ কাজ থেকে দূরে রাখুন এবং আমার জন্য মঙ্গল অবধারিত করুন, তা যেখানেই থাকুক না কেন। অতঃপর তাতে আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন। (অর্থ সুত্রঃ মালাবুদ্দা মিন”হু)
.
নামাজ ও দুয়ার পর, মোনাজাত শেষে পাক-পবিত্র বিছানায় অযু অবস্থায় শুয়ে যিকির করতে করতে, দরুদ শরীফ পড়তে পড়তে আর আপনি যেই বিষয়ের ব্যাপারে এস্তেখারা করছেন সে বিষয়টা মাথায় রেখে ডান কাতে কেবলামুখী হয়ে (পশ্চিম দিকে মুখ করে) ঘুমাতে হবে। নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর অন্তর যে বিষয়টির প্রতি দৃঢ়ভাবে সায় দিবে, সেটিকেই মঙ্গলজনক মনে করতে হবে।
.
যদি এক দিনে কিছুই অনুভব করা না যায় এবং মন কোন দিকেই সায় না দেয় তবে ক্রমাগত সাত দিন (প্রয়োজন হলে) এ আমল করলে ইনশাআল্লাহ সেই কাজের ভালো–মন্দ সম্পর্কে অবশ্যই জানা যাবে। [সুত্রঃ দুররে মুখতার]
যে কোন কাজে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার দুটি উপায়:
.
প্রথমতঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট এস্তেখারা র সালাতের মাধ্যমে কল্যাণ প্রার্থনা করা। কারণ, তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে সব চেয়ে ভাল জানেন। তিনি সব চেয়ে চেয়ে বেশী জ্ঞাণ রাখেন মানুষের কল্যাণ কোথায় এবং কোন পথে নিহিত আছে।
.
দ্বীতিয়তঃ অভিজ্ঞ, বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী লোকের পরামর্শ গ্রহণ করা। আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন, “সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।” [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]
.
পরামর্শ আগে না এস্তেখারার নামায আগে..?
.
এ ব্যাপারে আলেমগণের মাঝে মতোবিরোধ রয়েছে। তবে সবচেয়ে সঠিক হল, আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল ইসাইমীন (রহ.) এর মত যা তিনি রিয়াদুস সালিহীনের ব্যাখ্যা গ্রন্থে প্রাধান্য দিয়েছেন। তা হল, আগে এস্তেখারার সালাত আদায় করতে হবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
.
ﺇِﺫَﺍ ﻫَﻢَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺑِﺎﻷﻣْﺮِ ﻓَﻠْﻴَﺮْﻛَﻊْ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ….
.
“তোমাদের কেউ কোন কাজের মনস্থ করলে সে যেন, (সালাতুল এস্তেখারার) দু’রাকায়াত সালাত আদায় করে….।” এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্ব প্রথম সালাতুল এস্তেখারা আদায় করার কথা বলেছেন।.
.
এস্তেখারা প্রসঙ্গে লক্ষনীয় কিছু
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
.
১) ছোট-বড় সকল বিষয়ে এস্তেখারা করার অভ্যাস গড়ে তোলা ভাল।
.
২) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন, আল্লাহ আপনাকে যে কাজ করার তাওফীক দিয়েছেন তাতেই আপনার কল্যাণ নিহীত রয়েছে। তাই একান্ত মনোযোগ সহকারে স্থীর চিত্তে এবং আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্বের কথা স্বরণ করে তার নিকট দুয়া করুন।
.
৩) খুব তাড়াহুড়া বা একান্ত জরুরী প্রয়োজন না হলে যে সকল সময়ে সাধারণ নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ সে সকল সময়ে সালাতুল এস্তেখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকুন। তবে তাড়াহুড়া থাকলে নিষিদ্ধ সময়গুলোতেও তা পড়া যাবে।
.
৪) মহিলাদের ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসব জনিত রক্ত প্রবাহের সময় সালাতুল এস্তেখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে, এমতাবস্থায় নামায না পড়ে শুধু এস্তেখারা র দুয়াটি পড়া যাবে ।
.
৫) এস্তেখারার দুয়া মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে তা পড়তে অসুবিধা নেই। তবে মুখস্ত করার চেষ্টা করা ভাল।
.
৬) এস্তেখারা করার পর তার উদ্দিষ্ট বিষয়ে স্বপ্ন দেখা আবশ্যক নয়। স্বপ্নের মাধ্যমেও সঠিক জিনিসটি জানতে পারে আবার স্বপ্ন ছাড়াও মনের মধ্যে সে কাজটির প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে।
.
৭) উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনিত হলে আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যান । পিছুপা হবেন না বা হীনমন্যতায় ভূগবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেল তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।”(সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)
.
৮) সালাতুল এস্তেখারা পড়ার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত না হতে পারলে একধিকবার তা পড়া জায়েয আছে।
.
৯) এস্তেখারা র দুয়াতে যেন অতিরিক্ত কোন শব্দ যোগ না হয় বা সেখান থেকে কোন শব্দ বাদ না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। বরং হাদীসে বর্ণিত শব্দাবলী যথাযথভাবে পড়ার চেষ্টা করুন।
.
১০) অনেকের মনে একটি প্রশ্ন দেখা দেয় আর তা হল: একাধিক বিষয়ের জন্য কি একবার এস্তেখারা করাই যথেষ্ট না প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য পৃথকভাবে করতে হবে? এক্ষেত্রে বলব যে, প্রতিটি কাজের জন্য পৃথকভাবে এস্তেখারা করা উত্তম। তবে একবার এস্তেখারা করে দুয়ায় সকল বিষয়ের নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে।
.
১১) যে বিষয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে চান সি বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করুন। সেই সাথে সালাতুল এস্তেখারা ও আদায় করুন।
.
১২) এক জনের পক্ষ থেকে আরেকজন সালাতুল এস্তেখারা আদায় করতে পারবে না। তবে সাধারণভাবে তার কল্যাণের জন্য দুয়া করতে পারে। যেমন, মা-বাবা তাদের সন্তানের কল্যাণের জন্য নামাযের বাইরে কিংবা নফল নামাযে সাজদাহ রত অবস্থায় এবং তাশাহুদের দুরুদ পাঠের পরে দুয়া করতে পারে।
.
১৩) অন্যায় বা হারাম কাজে এমন কি মাকরূহ কাজেও এস্তেখারা করা জায়েজ নাই।
.
একটি ভুল ধারণাঃ এস্তেখারার জন্য কি ঘুমাতে হয়?
.
এই আমল করার জন্য শরীয়তে নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। রাত বা দিনের যেকোনো সময় তা করা যায়। কিন্তু অনেকে মনে করে, এস্তেখারা র জন্য ঘুমাতে হয় কিংবা রাত্রি বেলায় ঘুমানোর আগেই শুধু এস্তেখারা করা যায় । আবার অনেকে মনে করে, স্বপ্ন দেখলেই এস্তেখারা পূর্ণ হবে। আসলে এর কোনোটিই এস্তেখারা র জরুরি কোনো বিষয় নয়; বরং রাত-দিনের যে সময় নামায পড়া যায় তখনই দুই রাকাত নামায ও নির্দিষ্ট দুআটি পড়ে এস্তেখারা করে নেওয়া যায়।
তবে, রাতে করার ব্যাপারে একটু গুরুত্ব দেয়ার কারণটা হল, দিনে মানুষ সাধারণত ব্যস্ত থাকে তাই মন দিয়ে করাটা সবসময় সম্ভব হয়না আর রাতে সব কাজ সেরে মন দিয়ে আমলটা করতে পারা যায়। স্বপ্নের ব্যাপারটাও হল এই, স্বপ্নে ঐ ব্যাপারটার পক্ষে বিপক্ষে কিছু দেখলে সিদ্ধান্ত নেয়াটা আপনার জন্য বেশি সহজ হবে। আর এস্তেখারা করার পর না ঘুমানো হলে আপনার মন হয়ত যে কোন একদিকে ঝুঁকতে পারে কিন্তু এটা বুঝতেও আপনার বেগ পেতে হতে পারে। (ব্যক্তিগত অভিমত)
.
পরিশেষেঃ
.
বিপদাপদ বা দূর্ঘটনা ঘটলেই তাতে হাহুতাশ করার কারণ নেই। কারণ, আমাদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে যা আমরা চাই না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আবার অনেক সময় এমন কিছু আশা করি যার মধ্যে হয়ত কোন অকল্যাণ ও ক্ষতি অপেক্ষা করছে। আমরা কেউই ভবিষ্যত সম্পর্কে জানি না।
.
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “……তোমদের কাছে হয়তবা কোন একটা বিষয় পছন্দনীয় নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।” [সূরা বাকারা: ২১৬]
.
স্বীকারোক্তিঃ
.
এটি সংকলিত রচনা, কিছু নিজের কথাসহ (শুরুতে নিজের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল) এবং স্বাভাবিকভাবেই এখানে ভুল থাকতে পারে, যদি কোন ভুল হয় তো দয়া করে দেখিয়ে দিবেন এবং সাথে সাথে আল্লাহ্র কাছেও মাফ চাই ভুল-ভান্তির জন্য।
.
আল্লাহ আমাদের সকলকে তার সন্তোষমূলক কাজ করার তাওফীক দান করুন এবং সকল জ্বীন ও ইনসানকে হেদায়াতের উপর ইস্তেখামাত থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
credit : main autor. this is a copy post. ইসলামিক জ্ঞান সম্প্রসারণের জন্য এই পোস্টটি কপি করে এখানে দেয়া হয়েছে>