ফানুস মৌরি মরিয়ম Pdf Download 💖
fanus pdf download – ফানুস মৌরি মরিয়ম Pdf book: free Download
- বইঃ ফানুস pdf
- লেখিকাঃ মৌরি মরিয়ম
- প্রকাশনাঃ অন্যপ্রকাশ
- প্রচ্ছদঃ আরিফুল হাসান
- মূদ্রিত মূল্যঃ ৬০০ টাকা
ফানুস ওড়ানোর সময় সবাই যেমন ভীষণ আনন্দিত থাকে।তারা জানে ফানুস আজীবন আলো জ্বেলে আকাশে উড়তে পারে না।মোম ফুরোলেই নিভে যাবে কোথাও পড়ে যাবে।তবু লোকে ফানুস ওড়ায়,আনন্দ নিয়েই ওড়ায়। ঠিক তেমনি,তারাও প্রেমে পড়ে।
২০২১ সনের সবচেয়ে আকর্ষিত বই,যার জন্য এক শ্রেনীর পাঠক মহল অধীর চিত্তে অপেক্ষা করেছে।প্রি অর্ডার শুরুর পর থেকেই মাথায় ছিলো বইটা সংগ্রহের কথা,তবে বইমেলা থেকে সংগ্রহের প্ল্যান করি।বন্ধু আশিকের সহায়তায় বইটা সংগ্রহ করি এবারের বইমেলা থেকে।তারপর নানা কারণে দেরী হলেও বইটি নিয়ে বসে পড়লাম।সারাদিন পড়ার পর এক অদ্ভুত অনুভূতি। আর সেই অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ করব মুক্তচিত্তে।
উপন্যাসের ধরণঃ সামাজিক রোমান্টিক উপন্যাস।উপন্যাসের ফর্মায় পড়ছে কি না জানি না।বড় গল্প বলা যেতে পারে।তবে তিন মানব মানবীর এক ত্রিমুখী ভালোবাসার ত্রিকোণ তৈরী হয়েছে, যার ফাঁকে ফাঁকে লেখিকা খুব চমৎকার কিছু সামাজিক সমস্যাকে আলোকিত করেছে।
ফানুস বই রিভিউ : কাহিনী সারসংক্ষেপঃ
পেট্রা,প্রিয়,নিকিতা এই তিন চরিত্রের রসায়নে রসায়িত হয়েছে এই গল্পের পটভূমি।গল্পে দেখা যায়, এক সন্তানের পিতা প্রিয় নিজের বিবাহিত স্ত্রীর প্রতি বিমুখ।কখনো দারুণভাবে বকছে, কখনো নিজেই অনুতপ্ত হয়ে ভালো আচরণ করছে!
তাহলে কি প্রিয় বাইপোলার নাকি মানসিক রোগী?নাকি পরনারীতে আসক্ত?আর পেট্রারই বা ভূমিকা কী?
আজব এই দ্বিধা নিয়ে যখন বইটা পড়তে শুরু করলাম শুদ্ধর পবিত্র সরলতায় মুগ্ধ হতে লাগলাম একদিকে যেমন, তেমনি এক এক রহস্য উন্মোচন হতে লাগলো হর্ষ,বিষাদ,আনন্দ,বেদনা,বিষ্ময়,সব অনুভূতির সাগরে অবগাহন করা শুরু করলাম।
প্রচ্ছদ,ভাষা,সামগ্রিক অলংকারঃ
গল্পে এক বাচ্চা তার বাবার হাত ধরে তুষার ঝড়ে ফানুস ওড়ানো দেখছে।পুরা গল্পে শুদ্ধর তার মায়ের কাছে যাবার আকুতি,আর সন্তানের কষ্ট প্রিয়র হৃদয়ের অনুভূতি যেন এক কথায় প্রচ্ছদে ফুটে উঠেছে।গল্পের মূল ভাবার্থ যেন নিঃশব্দে চিৎকার করে পাঠককে বলছে।
আধুনিক মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজের চরিত্রগুলো ফুটে উঠেছে যেমন নিপুণ কারিগরের তুলির ছোঁয়ায়,তেমনি তাদের সাবলীল ভাষা,প্রকাশভঙ্গিতে গল্পটি যেন আর ও প্রাণ পেয়েছে।গল্পের প্রয়োজনে চলতি কিছু শব্দের ব্যবহার পাঠকদের কাছে চরিত্রগুলোকে আর ও আপন করে তুলেছে।পাঠক পড়তে পড়তে মনে করেছে প্রিয়,পেট্রা,নিকিতা এরা প্রত্যেকেই তাদের জীবনের অংশ,তাদের আপনজন,চেনা পরিচিত।চরিত্রের সাথে পাঠকের একাত্মবোধ এই গল্পে লেখিকার এক মাইল ফলক।
এই গল্পের প্রতিটা চরিত্র তার আপন ব্যাক্তিত্বে বিকশিত।তবে একটি চরিত্রের প্রতি যেমন আমার অন্য রকম ভালোবাসা কাজ করেছে তেমনি আরেকটি চরিত্রের প্রতি বিরক্তি কাজ করেছে।নিচে দুইটার সম্পর্কেই বিশ্লষণ করছি।
পেট্রাঃপুরা গল্পে এই চরিত্রকে আমার লৌহ মানবী বা iron woman এর মতো লেগেছে।জীবনের সবচেয়ে কষ্টের মুহুর্তে, সবচেয়ে কঠিন সময়ে সে নিজের আবেগকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রিয় মানুষটার ভালোলাগা, ভালোবাসা,ভালো থাকাকে importance দিয়েছে।মানবতাকে রেখেছে সবার উপরে,ভালোবাসার ও উপরে।গল্প পড়তে পড়তে পেট্রার প্রতি এক অচেনা টান অনুভব করেছি।
হিন্দু ধর্মের পুরাণে মেয়েদের দেবীরূপে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে,যে সর্বংসহা।পেট্রার মতো এমন শক্তিশালী নারী চরিত্র
আমাকে আলোড়িত করেছে।এ যেন মিশরের সেই রাণী ক্লিওপেট্রা,যে কোনো ঝড়কেই ভয় করে না।
প্রিয়ঃপুরা উপন্যাসে পড়া আমার সবচেয়ে বিরক্তিকর চরিত্র লেগেছে।প্রিয় বয়সে বড় হওয়া স্বত্তেও immature behaviour করে গিয়েছে।যুক্তি বা লজিক দিয়ে চিন্তা না করে আবেগের স্রোতে গা ভাসিয়েছে।কিন্তু প্রিয়র এই পাগলামি যদি ১৭-১৮ হতো তাহলে মানতে পারতাম।কিন্তু একজন ৩০ বছরের পুরুষের কাছে তা নিতান্তই বিরক্তিকর ও শিশু সুলভ আচরণ।
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
গল্পে প্রথমে খুবই confused ছিলাম।ছেলে কার!কার সাথে থাকে!এত ভালোবাসা কেন এ বিচ্ছেদ? কিন্তু একটু একটু পড়ছিলাম আর আমি ও যেন এই গল্পের এক চরিত্র হয়ে যাচ্ছিলাম।
ত্রিমুখী এ টানাপোড়েনে আমার বিচারের দন্ড কখনো একদিকে যাচ্ছিলো, কখনো সরল দোলকের মতো সুইং করে অন্যদিকে যাচ্ছিলাম।প্রতিটা চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্বে নিজেই আহত হচ্ছিলাম,কিভাবে গল্পের শেষটাকে happy ending করা যায় এই চিন্তা করতে করতে এক সময়ে কুলকিনারা না পেয়ে হতাশ হয়ে লেখিকার কলমকেই বিচারের ভার দিলাম।
সমাজবদ্ধজীব হিসেবে বাল্যকাল থেকে ভালো, মন্দের যে চিন্তা চেতনার আমাদের ভেতরে প্রোথিত করে দেয়া হয় আমাদের অজান্তেই সেই ভালো মন্দের বিচারে নিজের বিবেকের কাছে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিলাম।মালোয়শিয়ার
তিনদিনের সফর আমি দুই খন্ডে ভাগ হয়ে যাই।আমার অনুভূতিশীল মন বারম্বার বলে চলেছে যা হচ্ছে তাই ঠিক,এক যুগ খরার পর বৃষ্টির আগমনের প্রশান্তি আরেকদিকে সেই প্রোথিত ভালো মন্দের যে সংস্কার তা বিবেককে বলছে যা হচ্ছে তা ঠিক নয়।
পত্রিকায় বেশ কিছুবছর আগে ethnic cleansing নিয়ে পড়েছিলাম।Religious genocide নিয়ে পড়া ও হয়েছে বেশ কিছু উপন্যাস।কিন্তু চরিত্রগুলোর সাথে এমন মিশে যাওয়া খুব কম হয়েছে।
গল্প পড়তে পড়তে মনে হয়েছে আমি যেন রূপকথার সেই এলিস যে র্যাবিট হোলে পড়ার পর নিচে পড়তেই আছে ক্রমাগত।পেট্রার জীবনের দুঃখ যেন শেষই হবার নয়,একবার ভাবলাম স্মরণ এলো বুজি হাতটা ধরতে, কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না।
এই রিভিউর মধ্যে সবচেয়ে বিরক্তিকর চরিত্র হিসেবে আমি প্রিয়কে উল্লেখ করেছি।সমাজ আমাদের চোখে পুরুষ বা নরের যে definition set করেছে। আমি সেই মানদন্ডের বিচার প্রিয়কে বিচার করেছি।কিন্তু প্রিয়কে পুরুষ না ভেবে মানুষ ভেবে তার আবেগ,অনুভূতি, অসহায়ত্বকে লেখিকা অনুভব করতে শিখিয়েছে।
ফানুস মৌরি মরিয়ম বই রিভিউ :
এই গল্পটা পড়তে গিয়ে আমার কেন যেন লেখিকার লেখা দ্বিতীয় গল্প অভিমানিনীর কথা মনে হয়েছে।নীরব,দিতীয়া আর মানসীর যে টানাপোড়েন তাই আমি নতুন আঙ্গিকে, নতুন চরিত্রের মাঝে দেখতে পেয়েছি।
গল্পের প্লট ভিন্ন হলেও বেশ কিছু মিল খুঁজে পেয়েছি,কিছু ডায়লোগেও মিল খুঁজে পেয়েছি।যার জন্য পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এ যেন সেই পুরাতন সুরা যা নতুন বোতলে ভরে পরিবেশন করা হয়েছে।
একজন শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার মানুষ কিভাবে নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারে, তাই আমার বোধগম্য হয় নি।(হ্যা অনেক ক্ষেত্রে অনেক নারী নির্যাতনকারী পুরুষ থাকলেও প্রিয়কে প্রথম থেকে লেখিকা যেভাবে উপস্থাপন করেছেন,যেভাবে পেট্রার সম্মানের জন্য সে লড়ছে সেভাবে এই প্রিয়র আচরণ মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে।)আবেগী মন যদিও নিকিতার থাপ্পড়কে সমর্থন করলেও কিছু সময় শেষে বিবেকের প্রশ্নের দাড়স্থ হয়েছি।আজ প্রিয়কে young generation (লেখিকার পাঠকের বেশিরভাগ অংশ) crazy lover এর রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করায় তাহলে তারা কি শিখবে?নারীর গায়ে হাত তোলা ডাল ভাত।আর নিকিতার আচরণ ও টিপিক্যাল নিব্বা নিব্বি আচরণ।যে স্বামীর হাতে মার খায় কিন্তু অন্য কারোর সমালোচনা নিতে পারে না।
এই গল্পে বাবর খান ভিলেনরূপে আবির্ভূত হলেও পুরা গল্পে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সময়,পরিস্থিতি,আর জাতিবাদ বা ধর্মীয় বিভেদ।এই তিন নিয়ন্ত্রকের হাতের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছে তিন চরিত্র।
বইয়ের কিছু বাক্যের এক শব্দের পর পরের শব্দের মিল খুঁজে পায় নি।কিছু বানান ভুল পেয়েছি।কিছু জায়গায় রহস্য আরও ঘনীভূত করতে গিয়ে মনে হয়েছে রাবারের মতো ঘটনা টানছে।আর না হলে গরুর মতো জাবর কাটছি।গল্পের উপস্থাপনায় আরেকটু precise হবার দরকার ছিল।গল্পের প্রকাশভঙ্গিতে মনে হয়েছে epic বা মহাকাব্য পড়ছি,কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা নয় বরং পাঠক গোলক ধাঁধাঁয় আটকে গিয়েছে চরিত্রগুলোর সাথে।
উপসংহারঃএকজন সাহিত্যিক যদি তার পাঠককে তার রচনায় এক মুহুর্তে হাসাতে পারে,আর পরবর্তী মুহুর্তে কাঁদাতে পারে তাহলে সেই সাহিত্যিক পাঠক হৃদয়ে রাজত্ব করে।আর এই মানদন্ডের বিচারে লেখিকা দারুণ ভাবে পাঠককে হর্ষ,বিষাদ,ভালোবাসা,বিচ্ছেদ,পুনরায় মিলন প্রতিটি অনুভূতির সাথে খুব সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।বইটি পড়ে পাঠক বিভিন্ন emotional stage এর মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করেছে।
মানবীয় আবেগ সব বিচার বিবেচনার উর্ধ্বে থাকলেও দিনশেষে মানবতা,আর ত্যাগের জয় জয়কার সর্বত্র।