Others PDF Books

হারিয়ে যাওয়া মুক্তো শিহাব আহমেদ তুহিন pdf (eBook)

নাম: Hariye Jawa Mukto হারিয়ে যাওয়া মুক্তো
লেখক মূল : শিহাব আহমেদ তুহিন  Shihab Ahmed Tuhin
সম্পাদনা : শায়খ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া ।

ধরণ: ইসলামি আদর্শ ও মতবাদ।

হারিয়ে যাওয়া মুক্তো বই রিভিউ:

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীমঃ হারিয়ে যাওয়া মুক্তো

কথায় আছে ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না’ অর্থাৎ নিজ দেশে গুণীর কদর নেই। মাওলানা আব্দুর রহীমের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কাজী জাহান মিয়া যখন ‘আল কুরআন দ্যা চ্যালেঞ্জঃ মহাকাশ পর্ব’ নামে তিন খন্ডের বই লিখছিলেন তখন তার ভূমিকায় এদেশের একজন নামকরা আলেম (নাম ভুলে গেছি) লিখেছিলেন, কাজী জাহানের বইটা যদি বাংলা ভাষায় না প্রকাশ হয়ে ইংরেজি কিংবা ফার্সি ভাষায় প্রকাশ হত তাহলে লেখক দুনিয়া জোড়া খ্যাতি পেতেন। মাওলানা আব্দুর রহীমের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য।

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম ছিলেন বিশ শতকের এক অনন্যসাধারণ ইসলামী প্রতিভা ! গত শতকে যে   ক’জন খ্যাতনামা মনীষী ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা কায়েমের জিহাদে নেতৃত্ব দানের পাশাপাশি লেখনীর সাহায্যে ইসলামকে একটি কালজয়ী জীবন-দর্শন রূপে তুলে ধরতে পেরেছেন, তিনি তাদের অন্যতম । এই ক্ষণজন্ম পুরুষ ১৩২৫ সনের ৬ মাঘ (১৯১৮ সালের ১৯ জানুয়ারী) সোমবার, বর্তমান পিরোজপুর জিলার কাউখালী থানার অন্তর্গত শিয়ালকাঠি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তারপর ১৯৩৮ সালে তিনি শর্ষীনা  আলিয়া  মাদ্রাসা থেকে আলিম এবং ১৯৪০ ও ১৯৪২ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে ফাযিল ও কামিল ডিগ্ৰী লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার জ্ঞানগর্ভ রচনাবলি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণায় নিয়োজিত থাকেন। ১৯৪৬ সালে তিনি এ ভূখণ্ডে (বর্তমান বাংলাদেশ) ইসলামী জীবন  ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার  আন্দোলন শুরু করেন এবং সুদীর্ঘ চার দশক ধরে নিরলসভাবে এর নেতৃত্ব দেন । বাংলা  ভাষায় ইসলামী জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) শুধু পথিকৃতই ছিলেন না, ইসলামী জীবন দর্শনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ সম্পর্কে তার প্রায় ৬০টিরও বেশি গ্রন্থ পাওয়া যায়।

তার অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার লিখিত কালেমা তাইয়েরা, ইসলামী রাজনীতির ভূমিকা’, ‘মহাসত্যের সন্ধানে’, ‘বিজ্ঞান ও জীবন বিধান’, ‘বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব, “আজকের চিন্তাধারা’, “পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি’, ‘সুন্নাত ও বিদয়াত”, “ইসলামের অর্থনীতি’, ‘ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন’, ‘সূদমুক্ত অর্থনীতি’, ‘ইসলামে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও বীমা’, ‘কমিউনিজম ও ইসলাম’, ‘নারী’, ‘পরিবার ও পারিবারিক জীবন’, শিরক ও তাওহীদ”, “আল-কুরআনের আলোকে নবুয়্যাত ও রিসালাত’, অন্যতম। এছাড়াও তার “আল-কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার’, ইসলাম ও মানবাধিকার’, ‘ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তাধারা’, ‘রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী দাওয়াত’, ‘ইসলামী

শরীয়াতের উৎস’, ‘অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম’, ‘অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম’, ‘শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি’, ‘ইসলামে জিহাদ’, ‘হাদীস শরীফ (তিন খণ্ড) ইত্যাকার গ্রন্থ দেশের সুধীমহলে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলেছিল। এছাড়া অপ্রকাশিত রয়েছে তার অনেক মূল্যবান পাণ্ডুলিপি।

মৌলিক ও গবেষণামূলক রচনার পাশাপাশি বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী মনীষীদের রচনাবলি বাংলায় অনুবাদ করার ব্যাপারেও তার কোনো জুড়ি নেই। এসব অনুবাদের মধ্যে রয়েছে মওলানা মওদূদী এর বিখ্যাত তাফসীর ‘তাফহীমুল কুরআন’, আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী লিখিত ‘ইসলামের যাকাত বিধান (দুই খণ্ড) ও ইসলামে হালাল হারামের বিধান’, শহীদ মুহাম্মদ সাইয়েদ কুতুবের ‘বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত’ এবং ইমাম আবু বকর  আল-জাসসাসের  ঐতিহাসিক তফসীর ‘আহকামুল কুরআন’ । তার অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যাও ৬০টিরও উর্ধে। মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-র  অন্তর্গত ফিকহ একাডেমীর একমাত্র সদস্য ছিলেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সূচিত “আল-কুরআনে অর্থনীতি’ এবং ‘ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস’ শীর্ষক দুটি গবেষণা প্রকল্পেরও সদস্য ছিলেন। প্রথমোক্ত প্রকল্পের অধীনে প্রকাশিত দুটি গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ তারই রচিত। মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম ১৯৭৭ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন ও রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলন সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভাতে যোগদান করেন। এই যুগস্রষ্টা মনীষী ১৩৯৪ সনের ১৪ আশ্বিন (১৯৮৭ সালের ১ অক্টোবর) দুনিয়া ছেড়ে মহান আল্লাহর সন্নিধ্যে চলে গেছেন (ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল ছিল লেখকের ৩৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী। আল্লাহ উনাক উত্তম প্রতিদান দান করুন।

পরিশেষে বলব, যে কোন কারণেই হোক, মাওলানা আব্দুর রহীম বর্তমান যুব সমাজের কাছে অপরিচিত রয়ে গেছেন। বাংলা ভাষায় ইসলাম কে জানতে হলে মাওলানাকে পড়ার বিকল্প নেই। আপনি হয়তো ইসলামের কোন বিষয়কে জানার জন্য বিদেশি ভাষায় লিখিত কিংবা অনুদিত বই পড়ছেন, অথচ দেখা গেল সে বিষয়ে মাওলানা আব্দুর রহীম তার কলমের যাদুতে তা ব্যখ্যা করে গেছেন। যারা ইসলামকে নিছক অন্য ধর্মের মত একটি ধর্ম হিসেবে ভাবেন না বরং একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ভাবেন এবং ইসলামের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভূমিকা ভাল করে জানতে চান তাদের কে মাওলানা মওদুদীর পাশাপাশি মাওলানা আব্দুর রহীমকে জানার বিকল্প নেই। কেননা তারা দুজনেই কেবল তাত্ত্বিক ছিলেন না, সরাসরি কর্মীও ছিলেন। তাই, মাওলানার ব্যাপারে কানে তুলা না দিয়ে আমাদের কান খাড়া করা দরকার।

প্রাপ্তিস্বীকারঃ লেখাটি পাঠাগার ডট কম থেকে সংগ্রহ করে পরিমার্জন করা হয়েছে।

hariye jaoya mukta -হারিয়ে যাওয়া মুক্তো: pdf download link

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!