কিভাবে শেখ মুজিব নিহত হয়েছিলেন, তাজউদ্দীন এবং অন্য ৩ নেতাকে জেলের ভিতরে কারা কিভাবে এবং কেন হত্যা করেছিলো, জিয়া কে কেন হত্যা করা হয়েছিলো, এসব ঘটনা পূর্ণ বর্ণনা রয়েছে এই বইয়ে। বর্ণনার সাথে মুদ্রিত ছবি ও দলিলপত্রের তালিকা ও আরো কিছু সংযুক্তি আছে যা পাঠককে এই ঘটনা গুলোর বর্ণনা বিশ্বাস করতে সাহায্য করবে। ১৩টি অধ্যায়ে স্বাধীনতা উওর বাংলাদেশর বুকে ঘটে যাওয়া এসকল ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে লিখেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সরকারের প্রতি দেশের জনগণের ছিল অগাধ আস্থা। কিন্তু পরবর্তীতে দুনীতি, স্বজনপ্রীতি, পূর্বের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালনের ব্যর্থতা আর বাঙালি জাতির প্রতি তার দলের বিশ্বাসঘাতকতা কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে তিক্ত প্রতিবাদের ঝড় উঠে। তাছাড়া, পাকিস্তানে ১০ বছর কারাবন্দী থাকায় সেনাবাহিনীর প্রতি মুজিবের তিক্ত অভিজ্ঞতা সেনাবাহিনীর প্রতি কৃত অবহেলা অন্যায়ের পিছনে ইন্ধন জুগিয়েছিলো। আর এ সবকিছু মিলিয়ে সেনাবাহিনী তার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। ধানা বাদে বিদ্রোহ।
সেনাবাহিনীর বেশি ভাগ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আর তারাই তাকে হত্যার নীল নকশা তৈরি করেন। মেজর ফারুক তাকে হত্যার মূল প্লানিং করেছিল। সাক্ষাতকারে তার মন্তব্য ছিলো, দেশের মঙ্গলের কথা বিবেচনা করেই মুজিবকে তারা সরিয়ে ফেলানোর চিন্তা করে, কারণ অনন্য কোনো উপায়ে তাকে সরানো যাচ্ছিলো না। আর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্টা দিকে তার আগ্রহ তার প্রতি এসকল মানুষ কে তার প্রতি আর বিষিয়ে তুলে। কিন্তু জাতির প্রিতার পরিবারকে বর্বরচিতে হত্যা পুরো জাতির জন্য এক কলঙ্কজনক অধ্যায়! কি ভাবে মুজিবকে হত্যা নকশা তার পুরো পরিবার কে শেষ করে সমাপ্ত হয় তার বর্ণনা আছে বইয়ে। অবাক করার বিষয়, মুজিবের মৃত্যুতে দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রতিবাদ করেননি। যেন তারা তার শাসনামলের দুনীতি, অন্যায় অনাচার থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানি দের সাথে যোগসূত্র রাখার দায়ে দোষী খন্দকার মোশতাককে তবু মেজররা ক্ষমতায় বসাই এ-ই ভেবে, যে তাকে তারা তাদের ইচ্ছামতো সময়ে ক্ষমতাহীন করা যাবে। কিন্তু চালাক উকিল মোশতাক তা হতে দেননি সহজে। দেশের মানুষরা যেখানে চেয়েছিলেন ইসলামিক আদর্শে গঠিত রাষ্ট্র,মোশতাক সেখানে আবারও বিশ্বাসঘাতকতা করে ক্ষমতায় আসীন হয়।
খালেদ মোশরফর নেতৃত্বে সংগঠিত অভুথানে বাধ্য হন পদত্যগ করতে। মেজররা যে আশায় মুজিবকে হত্যা করেছিল তা যেন আবারো মোশতাকের মাধ্যমে নষ্ট হচ্ছিলো। আর এত সবকিছুর মধ্যে প্রাণ হারাতে হয় জাতির চার নেতাকে। অভুথান পাল্টা অভুথানে একসময় জিয়া ক্ষমতায় আসেন। তিনি জাতীয়তাবাদী ধারণার সৃষ্টি করেন, যা বাংলাদেশিদের মনোঃপুত হয়েছিলো। কিন্তু ক্ষমতায় বহাল থাকতে অনেক সেনাসদস্য দের তিনি হত্যা করে, যা তার মৃত্যুর অন্যতম কারণ ছিলো। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ দুরভিসন্ধি আর হত্যা বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই চলে আসছে। এক হত্যা আর এক হত্যাকে ত্বরান্বিত করেছে – দেশটাকে আবদ্ধ করেছে রক্তের ঋণে। শেখ মুজিব ও জিয়া উভয়েরই শাসনামলে নিজেরা সৎ হিসেবে কাজ করলেও তাদের ঘিরে যারা ছিলেন তাদের কে সততা শিখাতে পারননি। ক্ষমতায় অটল থাকার জন্য তারা যে পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, সেগুলোই তাদের পতন ত্বরান্বিত করেছিলো। বাংলাদেশর সূচনালগ্ন থেকে এই কালিমাময় ইতিহাসগুলোর নেপথ্যে যে কারণগুলো দায়ী ছিলো সেসব জানতে সকলকে অবশ্যই বইটি পড়া উচিত।