|

(Pdf) মৃত্যুক্ষুধা কাজী নজরুল ইসলাম Pdf Download (mrittu khuda)

 

বই:→ মৃত্যুক্ষুধা pdf ( Hunger of Death)

লেখক:→কাজী নজরুল ইসলাম

ক্যাটাগরি/ধরণ:→জীবনধর্মী

১ম প্রকাশ:→ ১৯৩০ সাল

ফরম্যাট: পিডিএফ ডাউনলোড(download)

মৃত্যুক্ষুধা কাজী নজরুল ইসলাম Pdf Download

 

 

মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাস রিভিউ

কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়ক। মুসলমান, কনভার্টেড ক্যথলিক খ্রিস্টান এবং দুয়েক হিন্দু ঘরের বাসস্থান। ক্ষুধা, দুঃখ-দুর্দশা এদের নিত্যদিনের সঙ্গী। মাঝে মাঝে ঝগড়া করলেও পরে তা নাই হয়ে যায় ক্ষুধা-যন্ত্রণার সমীকরণে। সেখানে বসবাসরত একটি পরিবারের অভিভাবক হলো প্যাঁকালের মা কুঁদুলী। সে শুধু প্যাঁকালেরই মা নয় বরং পরপারে চলে যাওয়া ৩ সন্তান ও একমাত্র কন্যা পাঁচীর মা। আশ্রিতা বোন আর এক ডজন ভাইপো- ভাইঝির ভোরণ-পোষণের দায়িত্ব তাই প্যাঁকালের উপরেই।

 

প্যাঁকালের বয়স ১৮ কি ১৯ বছর। টাউনের থিয়েটার দলে নাচে, সখী সাঝে। বাবুদের সাথে মিশতে মিশতে চুলে টেরি কাটে, চা-পান খায়। আবার কখনো রাজমিস্ত্রিরর কাজও করে।

 

একদিন প্যাকালের মা প্যাঁকালকে তার অপরূপ সুন্দরী মেজ-বৌ এর সাথে বিয়ে দেয়ার সংকল্প ব্যক্ত করলে প্যাকাল বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় কাউকে না জানিয়েই। এমনকি মধু ঘরামির ১৪ বছর বয়সী কালো কিন্তু লাবণ্যময়ী কুর্শীকেও নয়। প্যাঁকালের চলে যাওয়াতে তার পরিবার আরো দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে পড়ে যায়।

 

মেজবৌ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মনটিও সুন্দর সন্তানদের দুমুঠো খাদ্যর জন্য আর প্রিতিবেশীদের মিথ্যে অপবাদে মেজ-বৌ খ্রিস্টান হয়ে যান। তারপর পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ছোট্ট দুটি শিশুকে রেখেই একদিন চলে যান বরিশালে।

 

এদিকে কৃষ্ণনগরে নতুন বসাবাস শুরু করেন নাজির আর লতিফা বেগম। এখানে উথ্থান হয় আনসার আর রুবী নামের দুজন চরিত্রের।

 

আনসার একজন বিপ্লবী নেতা যদিও পলিশের ধারণা সে একজন রাশিয়ান কমুনিস্ট গুপ্তচর। আসলে সে শ্রমিক দরিদ্রদের স্বপ্নের নেতা। যে নিজের জীবনকে কষ্ট দিয়েই চলেছে অন্যর কষ্টকে লাঘব করার জন্য। অন্যের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। যে মানুষটি তার বুকে ফুল ফুটিয়েছিলেন মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য সেই বুকেই বাসা বাঁধে মরণ ব্যাধির।

 

অপরদিকে, রুবির বাবা মা তাদেরর পছন্দদের ছেলের সাথে রুবিকে বিয়ে দেয় কিন্তু সে এটাকে মেনে নেয়নি। ঘটনাপ্রবাহে সে বিধবা হয় কিন্ত বাবা মায়য়ের উপর রাগ করে অপ্রকৃস্ত জীবন শুরু করে। একদিন সেই রুবিই অনিশ্চিত পথে পা বাড়িয়ে চলে যায় আনসারের কাছে।

 

আনসার আর রুবীর পরিণতি কি হয়েছিল? তাদের প্রেম কি তাদের বাঁচাতে পেরেছিল?

মেজ-বৌ কি ফিরে এসেছিল তার সন্তানদে কাছে, তার ধর্মের কাছে?

প্যাঁকাল আর কুর্শীর অবস্থাই বা কি হলো?

 

ক্ষুধার তাড়ণায় কেমন করে মানুষ ধর্মান্তরিত হতেও দ্বিধা করেনা, কেমন করে মানুষ নিজের সন্তানের মৃত্যু কামনা করে, কোন পরিস্থিতে মৃত্যুই তাদের কাছে ক্ষুধা হয়ে ওঠে, -উপন্যাসটি না পড়লে তা কখনোই জানা যাবেনা।

 

প্রতিক্রিয়া, প্রেক্ষপট ও মতামত :

“পুতুল-খেলার কৃষ্ণনগর।

যেন কোন খেয়ালি শিশুর খেলাশেষের ভাঙা খেলাঘর।

খোকার চলে-যাওয়া পথের পানে জননির মতো চেয়ে আছে – খোকার খেলার পুতুল সামনে নিয়ে।

এরই একটেরে চাঁদ-সড়ক। একটা গোপন ব্যথার মতো করে গাছ-পালার আড়াল টেনে রাখা।”

 

উপন্যাসটির শুরুটা এমন সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে যে একবসায় পড়ে ফেলতে এই শুরুটুকুই যথেষ্ট।

 

উপন্যাসটিতে প্রধানত দুঃখ, ক্ষুধা, দুর্দশা এসব ফোটে উঠেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধত্তোর এসব দুঃখ-যন্ত্রণা মানুষকে কিভাবে গ্রাস করেছিলো তা উপন্যাসটি পড়লে চোখের সামনে ভেসে উঠে। আর এসবকিছু লেখকের খেয়ালি মনের সৃষ্ট কিছু নয় বরং তা লেখকের কাছথেকে দেখা ঘটনাপ্রবাহ , যেখানে লেখক উপন্যাসের স্বার্থে চরিত্রগুলোর পরিবর্তন ঘটিয়েছেন মাত্র।

 

এ প্রসঙ্গে “চাঁদসড়কে নজরুল” স্মৃতিকথায় আকবর উদ্দীন বলেছেন, মৃত্যুক্ষুধা বইয়ে চাঁদ সড়কের কতগুলো সত্যিকার চরিত্র কেবল নাম বদলে ব্যবহার করা হয়েছে। গাজলের মায়ের আসল নাম ছিল হবির মা। তার তিন ছেলে- বড়ো নূর মোহাম্মদ, মেজো হাবিব ও ছোট করিম (প্যাঁকালে)। মেজো ছেলে হাবিবের স্ত্রীই মেজবৌ। ওমান কাতালি পাড়ার হিড়িম্বার সত্যিকার নাম কামিনী।”

 

১৯৩০ সালে মৃত্যুক্ষুধা প্রকাশিত হলেও ১৯২৭ সাল থেকে সওগাত পত্রিকায় তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছিল। ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত কাজী নজরুল ইসলাম কৃষ্ণনগরে চাঁদ সড়কের কাছে একতলা এক বাংলো প্যাটার্নে বসবাস করতেন। আর এসময়ে তিনি সেখানকার মানুষের দারিদ্র ক্ষুধা দুর্দশা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাছাড়া নজরুল নিজেই এসময় খুব দুঃখ-দুর্দশায় ছিলেন প্রকাশকদের পেমেন্টের অভাবে, অথচ সেই প্রকাশকদের দল তাঁর লেখা দিয়ে রমরমা ব্যবসা করত। তাই তো দুঃখু মিয়া এসময় রচনা করেন তার বিখ্যাত ও বহুল জনপ্রিয় “দারিদ্র” কবিতাটি,

“হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্‌।

তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান

কন্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,

অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;

উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,

বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!

 

উপন্যাসটি পড়ার সময় ঘটনা প্রবাহ মিলাতে একটু খাপছাড়া লাগতে পারে, তবে এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে।এক্ষেত্রে একটি মজার ঘটনা না উল্লেখ করলেই নয়, ১৯৬৯ সালে “বই” নামক সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া নজরুল এবং সওগাত পত্রিকার সম্পাদক নাসির উদ্দিন সাহেবের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় যে “মৃত্যুক্ষুধা” উপন্যাসটি পর্থমে এক পর্ব ছাপার পর নজরুলকে আর খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা, নজরুল এরকমই হাজারটা কাজ নিয়ে ভারতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন, তাঁকে পাওয়া দূরোহ ব্যাপার প্রায়ই। “সওগাত” পত্রিকার প্রুফের দায়িত্বে ছিলেন হাবিবুল্লাহ বাহার এবং কবি মঈনুদ্দিন, তারাই নজরুলকে খোঁজে বের করতেন সবসময়। সেবারও ধরে নিয়ে আসেন খেলার মাঠ থেকে, এনে বাকিটুকু লেখার তাগিত দিলে নজরুল বলেন তার মনে নেই কী লিখেছিলেন, তাই প্রকাশিত সংখ্যাটা দিতে হবে। তাঁরা ঐ আগের সংখ্যার ১ম পর্ব দিয়ে নজরুলকে তালা দিয়ে ঘরে আটকিয়ে চা পান সামনে দিয়ে একপ্রকার জোর করেই লিখিয়েছিলেন কাজীর বিখ্যাত উপন্যাস “মৃত্যুক্ষুধা” যে উপন্যাসটি ঘটনাপরম্পরায় একটু ছিড়ে ছিড়ে গাঁথুনি খেলেও পাঠক হৃদয়ে ঝড় তোলে, তোলবেই।

 

নজরুলের উপন্যাসে নজরুলই নায়ক। উপন্যাসের শুরুতে টেরিকাটা চুল আর থিয়েটারে গান গাওয়া প্যাঁকালের চরিত্র প্রতিনিধিত্ব করে লেটো গান দলের সেই নজরুলকে, আর শেষদিকে আনসারের বিপ্লবী প্রেম ও আদর্শ নজরুলের চরিত্রেরই বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

 

উপন্যাসের মূল উপকরণ দারিদ্র ও ক্ষুধা হলেও এতে রয়েছে রোমান্টিকতার ছোঁয়া। অার্থ-সামাজিক ও প্রছন্ন রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মের নামে ব্যবসা বা ধর্মের অপব্যবহারের দিকটিও ফুঁটে উঠেছে সুন্দরভাবে।

 

কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের কাছে বিদ্রোহী কবি হিসেবে অধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন সাম্যের কবি, পকৃতি ও প্রেমের কবি। কবি হিসেবে তিনি অধিক সমাদৃত হলেও তিনি ছিলেন প্রাবন্ধিক, সুরকার, গীতিকার , নাট্যকার এমনকি ঔপন্যাসিকও।

 

তার উপন্যাসের সংখ্যা মাত্র ৩টি হলেও তা বাংলা সাহিত্যের জন্য এক একটি নক্ষত্র ( অত্যন্ত আমি তা মনে করি)। মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসটি তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।

 

উপন্যাসে বিদ্রোহী কবিকে আপনি দেখতে পাবেন কোমল মন বিশিষ্ট একজন লেখক হিসেবে, কথাসাহিত্যিক হিসেবে। গদ্য ভাষা ব্যবহার “মৃত্যুক্ষুধা”কে পৌঁছিয়ে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। উপন্যাসে ব্যবহৃত অলংকার ও শিল্পরীতির কথা নাইবা বললাম।

 

কাজী নজরুল ইসলাম উক্তি:

এদের অভাব অসীম, অপরীমেয়। দুঃখ-দারিদ্র, রোগ-শোক, ক্ষুধা ও দূরভীক্ষ তাদের গ্রাস করে রাখে সর্বক্ষণ। এদের একদিকে মৃত্যু আর অন্যদিকে ক্ষুধা।

উক্তি ২:

“তুমি আমায় ভালোবাসো না এর চেয়ে বড় দুঃখ আমার আর নেই। আমার সবচেয়ে কাছের লোকটি ই সবচেয়ে অনাত্মীয়, এ ভাবতেও আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। হয়তো বাঁচতুম,কিন্তু এরপরে আমার আর বাচার কোনো সাধ নেই।” ~নজরুল ইসলাম (মৃত্যুক্ষুধা)

 

Mrittu khuda by Kazi Nazrul Islam pdf book free Download link: Click here

(অনলাইনে পড়ুন)

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *