একাত্তরের দিনগুলি জাহানারা ইমাম Pdf Download
বইয়ের নাম: একাত্তরের দিনগুলি
লেখকের নাম: জাহানারা ইমাম
বইয়ের বিষয় : দিনলিপি
ক্যাটাগরি : মুক্তিযুদ্ধের ডায়েরি, চিঠি ও স্মৃতিচারণ।
ফাইল টাইপ: Pdf(পিডিএফ)
প্রকাশনী: সন্ধানী প্রকাশক
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৬৮ পেজ
(Book price) মূল্য: ২৫৫৳
Ekattorer dinguli summary in bangla:
একাত্তরের দিনগুলি মুক্তিযুদ্ধের এক কালানুক্রমিক ইতিহাস। ইতিহাসটি রচনা করেছেন এমন একজন- যিনি ও তাঁর পরিবার মুক্তিযুদ্ধের এক সাহসী প্রত্যয়াশী। যদিও দিনলিপি, অর্থাৎ ব্যক্তিগত শােকস্মৃতি, তবুও তা অনন্ত হয়ে জেগে রয়েছে আমাদের সকলের অনুভূতির সঙ্গে।এই স্বাধীনতা যুদ্ধের অমােঘ বলয়েই দৃঢ় সংগ্রামের প্রতীক হয়ে আছেন মুক্তিযােদ্ধারা; আর তাঁদের বিস্ময়কর অবদানে ঋদ্ধ হয়ে আছে আমাদের বাংলাদেশ।বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ এক অর্জনের ইতিহাস এ দিনলিপির বিষয়বস্তু। এটি কোনাে মহাকাব্য নয়; এর অন্তঃশ্রোতে যখন তখন শিল্পের মহাবাদল নেমে আসেনি। তারপরও এটি সকল মহাকাব্যের অতীত, বান-ভাসানাে এক মহার্ঘ শিল্পের প্রণয়ােচ্ছাসে ঋদ্ধ, বিদগ্ধ।
Ekattorer Dinguli book Review–
▪️ একাত্তরের দিনগুলি শীর্ষক দিনপঞ্জির আকারে রচিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ।
▪️ শহিদ জননী জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সন্তান রুমীকে হারিয়েছেন। এই রচনায় গভীর বেদনার সঙ্গে আভাসে-ইঙ্গিতে তিনি তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণের কথা ব্যক্ত করেছেন।
▪️পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলায় প্রথমেই ঢাকার নগর-জীবন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছিল।
▪️শিশু-কিশােররা স্কুলে যাবে না। কিন্তু হানাদার বাহিনী জোর করে স্কুল-কলেজ খােলা রাখবে।
▪️বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে জোর করে রেডিও-টিভিতে বিবৃতি প্রদান করাবে; আর হত্যা-লুণ্ঠন-অগ্নি সংযােগ তাে আছেই- এই ছিল সেই দুঃসময়ে ঢাকার অবস্থা।
▪️সেই দুর্বিষহ অবস্থার মর্মন্তুদ বিবরণ পাওয়া যায় এই স্মৃতিচারণে।
▪️ পাকিস্তানিদের অত্যাচার ও ছেলে হারানোর কষ্ট।
▪️ বিশেষ করে গর্ভজাত সন্তান রুমীকে বাঁচানাের জন্য হানাদার বাহিনীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে লেখিকা যে আত্মমর্যাদা ও স্বাধিকার চেতনার পরিচয় দেন তা তুলনারহিত।
◼️বইটি কেন পড়বেন?
- ▪️একাত্তরের দিনগুলি বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক জাহানারা ইমাম রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই।
- ▪️গল্পটি নাটকীয়, স্বাধীনতা সংগ্রামের খাঁটি ইতিহাস।
- ▪️ প্রতিটি ঘটনাই ছিল বাস্তবভিত্তিক।
- ▪️ এখানে দিনলিপির ছলে গভীর মমতায় যুদ্ধদিনের কথাগুলো ফুটে উঠে।
- ▪️বইটি আপনাকে সেই সময়ে ঢাকায় কী চলছিল এবং বিশেষত কীভাবে মুক্তিবাহিনী পরিচালিত হয়েছিল সে সম্পর্কে জানাবে।
- ▪️আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করবে।
◼️বইটি কাদের জন্য-
- প্রত্যেকের একবার পড়া উচিত।
- দেশপ্রেমী প্রত্যেকের জন্যই পড়া আবশ্যক।(দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ)
◼️বইটি থেকে কিছু কথা-
▪️বইটিতে ১লা মার্চ (সোমবার) থেকে ১৬ই ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত দিনলিপি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
১লা মার্চ ১৯৭১(সোমবার); এখন থেকেই বইটির শুরু। শুরুতে আমরা যাকে পাই- রুমী ।এরপর পুরাে গ্রন্থেই রুমী জীবন্ত থাকেন, যেমন আছেন এখনও এবং থাকবেন অনন্তকাল।
▪️আজ বিকেলে রুমী ক্রিকেট খেলা দেখে তার বন্ধুদের বাসায় নেয় আসবে হ্যামবার্গার খাওয়ানোর জন্যে। (পৃষ্ঠা -১১)
শুরুতেই বাঙালির প্রতিরােধ আন্দোলনের একটি গার্হস্থ্য চিত্র পাই। রাজপথে আন্দোলন চলছে, চলছে স্বাধীন বাঙলার পতাকা উত্তোলনের কাজ- এবং এরই মাঝে একজন জাহানারা ইমাম- একজন মা, একজন স্ত্রী, একটি পরিবারের কত্রী- তিনি দুই সপ্তাহ ধরে খুঁজে ফিরছেন পূর্ব পাকিস্তানের তৈরি সাবান, তেল, টুথপেস্ট, বাসন-মাজা পাউডার এব়ং আক্ষেপ নিয়ে বলেছেন ‘কিন্তু পাই না। এই বােধটিও বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যদিও কারো কারো দৃষ্টিতেই এটি ছােটো মনে হতে পারে। এর ফলাফল কতােদূর ছিলাে- সেটাও প্রথমদিকেই খুঁজে পাওয়া যায়। জাহানারা ইমাম লিখেছেন- একমাত্র ইভা বাসন মাজা পাউডারটাই এখানকার তৈরি…প্রিয়া নামের এক ঢাকাই টুথপেস্ট বাজারে বের হবাে হবাে করে এখনও বের হতে পারছে না, আল্লাহই মালুম কি কঠিন বাধার জন্য! (পৃষ্ঠা-১১)
অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে একটি স্বনির্ভরতার সাহসী পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছিলাে, এবং এটাও স্পষ্ট যে পশ্চিম পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী তাতে ভীত সন্ত্রস্ত ছিলাে। তাই কঠিন বাধা’ দিয়ে তারা স্বাধীনতার স্বপ্নের মূলােৎপাটন করতে চেয়েছিলাে।
▪️পহেলা মার্চে রুমী-জামী স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গিয়েছিলাে। সেখান থেকে বাড়ি ফেরে রাত আটটারও পরে। একা। বন্ধুদের নিয়ে নয় রাষ্ট্রের পরিস্থিতি রুমীকেও ভাসিয়ে নেয়। কিন্তু মা তাে ঠিকই সাড়ে চারটার মধ্যে দুই ডজন হ্যামবার্গার বানিয়ে ওভেনে মৃদু গরমে রেখে দিয়েছেন। তাই মায়ের অভিমান হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু রুমীও জানতেন; জাহানারা ইমাম লিখেছেন- রুমী আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে দুই হাত তুলে, মুখে হৃদয় গলানাে হাসি ভাসিয়ে।(পৃষ্ঠা -১২)
▪️জাহানারা ইমামের পরিবারের সাথে একজন বিদেশীও থাকতেন। তাঁর নাম কিটি। যদিও ২রা মার্চেই কিটির প্রসঙ্গ আসে, কিন্তু তাঁর পরিচয় পাওয়া যাবে পাঁচ মার্চ, শুক্রবারের দিনলিপি থেকে। জাহানারা ইমাম লিখছেন- কিটি আমেরিকান মেয়ে- একটা স্কলারশিপ নিয়ে এদেশে এসেছে ডিসেম্বরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে মুনীর চৌধুরীর আন্ডারে ‘সমাজ-ভাষাবিজ্ঞানে বাংলার মান নির্ধারণ বিষয়ে গবেষণা করার জন্যে। ন’টা ভাষা জানে। বাংলা ভাঙা ভাঙা বলতে পারে। তাড়াতাড়ি বাংলা শেখার জন্যে কোনাে বাঙালি পরিবারে বাস করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাে কিটি। (পৃষ্ঠা ১৮)
▪️৬ই মার্চ জাহানারা ইমাম লেখেন-পরীক্ষা দেবার পর থেকে শরীফের অফিসে টুকটাক ড্রইং এর কাজ করে।….রেজাল্ট বের হবার পর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছে গত বছর অক্টোবরে বিভাগীয় প্রধানের বিশেষ অনুমতি নিয়ে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকনমিকস বিভাগে ক্লাশও করে। (পৃষ্ঠা ২০)
▪️মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময়ে বাঙালির প্রস্তুতির বেশ কয়েকটি ধাপ উঠে আসে গ্রন্থের মার্চের দিনগুলাের স্মৃতিচারণে। ১৯ মার্চের দিনলিপি থেকে জানা যায় একটি অভিনব স্টিকারের কথা। ‘একেকটি বাংলা অক্ষর একেকটি বাঙালির জীবন’। স্টিকারটি পরিকল্পনা ও ডিজাইন করেছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান (২ ডিসেম্বর, ১৯২১ ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮)। তিনি ‘বাংলার পটুয়া সমাজ’ বলে একটি সমিতিও গঠন করেন- যাঁরা শাপলা ফুলকে সংগ্রামী বাঙলার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করবার প্রস্তাব দেয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্বকে তুঙ্গে তুলে দেয় ঢাকা টেলিভিশন। তখন এর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন শিল্পী মােস্তফা মনােয়ার (জন্ম: ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫)। ২৩ শে মার্চের প্রতিরােধ দিবসে একটি অবিস্মরণীয় প্রতিবাদ হয় তার নেতৃত্বে।
রাত সাড়ে নয়টার মধ্যে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা থাকলেও। সেই দিন অনুষ্ঠান চলে ২৪ শে মার্চের প্রথম প্রহর পর্যন্ত।
জাহানারা ইমাম লিখেছেন-পেছনের কারণটি।
আজ দেখি মহােৎসব চলছে তাে চলছেই। সুকান্তের কবিতার ওপর চমৎকার দুটো অনুষ্ঠান হলাে।
- ১.’ছাড়পত্র
- ২. মোস্তফা মনােয়ারের প্রযােজনা।
ডঃ নওয়াজেশ আহমদের ফটোগ্রাফির সঙ্গে কবিতার আবৃত্তি। আরেকটা- দেশলাই, বেলাল বেগের প্রযােজনা। সুকান্তের দেশলাই আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে টিভি পর্দায় দেখা গেল অসংখ্য দেশলাইয়ের কাঠি একটার পর একটা জ্বলে উঠছে।
▪️এরপর শুরু হলো আবদুল্লাহ আল মামুনের এক নাটক- ‘আবার আসিব ফিরে। নাটক ২৩ মার্চের রাত পৌনে এগারােটায় শুরু হয়ে শেষ হয় ২৪ মার্চের প্রথম প্রহরে। রাত বারোটা বেজে নয় মিনিটে ঘােষক সরকার ফিরােজ উদ্দিন সমাপনী ঘোষণায় বলেন- এখন বাংলাদেশ সময় রাত বারােটা বেজে নয় মিনিট. আজ ২৪ শে মার্চ বুধবার। আমাদের অধিবেশনের এখানেই সমাপ্তি।
▪️স্বাধীনতার প্রস্তুতিপর্বকে যে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী নানাভাবে প্রতিহত করতে চেয়েছে তার একটি ছােটো কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত পাওয়া যায় ২২শে মার্চের লেখায়। জাহানারা ইমামের জীবনসঙ্গী শরীফ ইমামের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখক লিখেছেন- মিরপুরে, চট্টগ্রামে, পার্বতীপুর-সৈয়দপুরে বাঙালি বিহারী খুনােখুনি রক্তারক্তি হচ্ছে- সেনাবাহিনী বিহারিদের উস্কানি আর সাপাের্ট দিচ্ছে। (পৃষ্ঠা-৩৪)
▪️এতক্ষণ রহস্য বােঝা পেল। ২৩ মার্চ প্রতিরােধ দিবসে বীর বাঙালিরা টেলিভিশনের পর্দায় পাকিস্তানের পতাকা দেখাতে দেয়নি। (পৃষ্ঠা-৩৬)
▪️ ২৫শে মার্চ তারিখের নৃশংস গণহত্যার বিবরণ ২৬শে মার্চ, শুক্রবার থেকে ৩১শে মার্চ, বুধবার পর্যন্ত লেখাগুলােতে। সেখানে কামাল আতাউর রহমান নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক স্নাতক পরীক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বর্ণনা গা শিউরে উঠার মতাে। উল্লিখিত শিক্ষার্থী মােহসীন হলের আবাসিক ছিলাে- তাঁর জবানিতে জাহানারা ইমাম তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যার বর্ণনা- তবে বিশদ অর্থে নয়। তবে ছাব্বিশে মার্চে লেখার একেবারে শেষ দুটো লাইনেই নৃশংস গণহত্যার তীব্রতা লক্ষ্যণীয়। আবার আমরা সবাই নিচে নামলাম। দরজা খুলে উঠানে নেমে মিকির জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মােমবাতির কাঁপা কাঁপা আলােয় দেখলাম মিকি( গৃহপালিত কুকুরের নাম) মরে পড়ে আছে।একটি পশু- সেও সহ্য করতে পারেনি পঁচিশে মার্চের রাতের ভয়াবহতা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পশু বললেও- প্রাণীজগত লজ্জা পাবে। (পৃষ্ঠা ৪২)
▪️ তিন দিনলিপির এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত অংশে মুক্তিযুদ্ধের এক অবিনাশী তীব্রতা ধরা পড়ে। সেই থাকে উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অপপ্রচার নানা বিভ্রান্তির চিত্রও। ১৪ এপ্রিলের লেখার শুরুটা বেশ চমকপ্রদ। রুমীর খুব মন খারাপ। (পৃষ্ঠা ৬১)
▪️ এর কারণ হলাে- চীন পাকিস্তানকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছে। লেখক লিখেছেন- চৌ এন লাই ঘােষণা করেছেন; স্বাধীনতা রক্ষার জন্য চীন সরকার পাকিস্তানকে পূর্ণ সহযােগিতা দেবে। –প্রাণের বন্ধু বিপদের মুহূর্তে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। (পৃষ্ঠা ৬১-৬২)
▪️শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছে। কাগজে খুব ফলাও করে খবর ছাপা হচ্ছে। খাজা খায়রুদ্দিন এর আহবায়ক। সদস্য ১৪০ জন। তার মধ্যে স্বনামধন্য হচ্ছেন আবদুল জব্বার খদ্দর, মাহমুদ আলী, ফরিদ আহমদ, সৈয়দ আজিজুল হক, গোলাম আযম। (পৃষ্ঠা-৬২)
▪️রুমীর মুক্তিযুদ্ধে যাবার বিষয়ে জাহানারা ইমাম সম্মতি দেন একুশ এপ্রিল। তিনি লিখেছেন-….দিলাম তােকে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা, তুই যুদ্ধে যা। (পৃষ্ঠা ৬৬)
▪️আজ বিকেল চারটার সময় শান্তি কমিটির ৫১ অন্যতম সদস্য জনাব আবদুল জব্বার খদ্দর বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। শ্রোতামণ্ডলী: তিনটি ট্রাফিক পুলিশ, একটি মিলিটারি পুলিশ এবং একটি আর্মি জওয়ান। (পৃষ্ঠা-৭০)
বইটি হতে উক্তি:
যার কাজ তারে সাজে, অন্য লােকে লাঠি বাজে (পৃষ্ঠা ১০২)
▪️কম ক্ষতি হবে অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হবার পর খুব সহজে মেরামত করা যাবে।(পৃষ্ঠা-১২৪)
▪️(পশ্চিম পাকিস্তানের) লােকেরা কি বি.বি.সি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও অস্ট্রেলিয়া এসব শােনে না? শােনে, কিন্তু বিশ্বাস করে না। ওরা সরকারের ছেলে ডুলানো ছড়া শুনেই সন্তুষ্ট (পৃষ্ঠা-১৩৪)
▪️৪ সেপ্টেম্বর, শনিবারের লেখায় আমরা পাই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের (মূল প্রন্থে বানান লেখা হয়েছে মতিয়ুর রহমান) ইতিহাস। একই সঙ্গে এই ঘটনাকে একত্রিশ আগস্টের দৈনিক পাকিস্তান কীভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাে- তাও উল্লেখ আছে। পাকিস্তানের বর্বর সরকার মতিউর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক বলেছিলাে- এই প্রসঙ্গেই জাহানারা ইমাম লিখেছিলেন- যদি কোনােদিন পূর্ব বাংলার এই ভূখণ্ড স্বাধীন হয়, তবে মতিয়ুর রহমান- সেই স্বাধীন দেশ নিশ্চয়ই তােমাকে সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক খেতাবে ভূষিত করবে। (পৃষ্ঠা-১৯৯)
▪️২১ শে অক্টোবরে লেখা শেষ অনুচ্ছেদটি তারই চিহ্ন বহন করে ফখরুজ্জামানের কেবিনে ঢুকে দেখি ডা. ফজলে রাব্বি তাকে দেখতে এসেছেন। শুনলাম ফখরুকে রাব্বি বলছেন, ‘যান, ভালাে হয়ে ফিরে আসুন। এসে দেখবেন আমরা হয়তাে অনেকেই নেই। (পৃষ্ঠা-২২১)
▪️আবার আসবেন এই বাঙলায়। শহিদ জননী ৩১শে অক্টোবরের দিনলিপির শেষ লাইনে লিখছেন- কুমির নেই, বদি নেই, জুয়েল নেই কিন্তু যুদ্ধ আছে স্বাধীনতার যুদ্ধ। (পৃষ্ঠা ২৩২)
▪️বন্ধু-বান্ধুব- যার সঠিক রূপ হবে ‘বন্ধু-বান্ধব’ (পৃষ্ঠা-২৪৪)
▪️মা আর সন্তান রহলেন নতুন বাংলাদেশকে বরণ করে নেবার জন্যে। তাই ১৭ ডিসেম্বর, শুক্রবারের লেখায় শহিদ জননী লিখছেন- চুল্লু এতদিন সেন্ট্রাল জেলে ছিল। ওকে জেল থেকে বের করে এনে রুমীর অনুরাগী এই মুক্তিযোদ্ধারা রুমীর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। (পৃষ্ঠা-২৭০)
◼️বইটির প্রিয় লাইন-
ওরা আমাদের স্বাধীনতা দেবে না। স্বাধীনতা আমাদের ছিনিয়ে নিতে হবে সশস্ত্র সংগ্রাম করে।
◼️১৬ই (ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার )১৯৭১-
▪️আজ সকাল নটা পর্যন্ত যে আকাশযুদ্ধ-বিরতির কথা ছিল, সেটা বিকেলে তিনটে পর্যন্ত বাড়ানাে হয়েছে। দুপুর থেকে সারা শহরে ভীষণ চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা। পাকিস্তানি আর্মি নাকি সারেন্ডার করবে বিকেলে। সকাল থেকে কলিম, হুদা, লুলু যারাই এলাে সবার মুখেই এক কথা। দলে দলে লােক জয় বাংলাধ্বনি তুলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে কারফিউ উপেক্ষা করে। পাকিস্তানি সেনারা, বিহারিরা সবাই নাকি পালাচ্ছে। পালাতে পালাতে পথেঘাটে এলােপাথাড়ি গুলি করে বহু বাঙালিকে খুন-জখম করে যাচ্ছে। মঞ্জুর এলেন তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে, গাড়ির ভেতরে বাংলাদেশের পতাকা বিছিয়ে। তিনিও ঐ এক কথাই বললেন। বাদশা এসে বলল, এলিফ্যান্ট রােডের আজিজ মােটরসের মালিক খান জীপে করে পালাবার সময় বেপরােয়া গুলি চালিয়ে রাস্তার বহু লােক জখম করেছে।
মঞ্জুর যাবার সময় পতাকাটা আমাকে দিয়ে গেলেন। বললেন, ‘আজ যদি সারেন্ডার হয়, কাল সকালে এসে পতাকাটা তুলব।
◼️ব্যক্তিগত অনুভূতি-
▪️জাহানারা ইমামের ইতিহাস-কখন চৌরাসিয়ার বাঁশির মতােন আমাদের ঘিরে রাখে,আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। দুই একটি পারিবারিক ঘটনা পরিক্রমার মধ্য দিয়ে বইটি শুরু হয়, এবং ধীরে ধীরে তা প্রবেশ করে ইতিহাসের আলােকোজ্জ্বল গহ্বরে।
১৯৭১ সালে ১৭ কোটি বাঙালির যৌথভাবে রচিত করেছিল যে মুক্তিযুদ্ধ, আজ দীর্ঘ ৪৯ বছর পরও সেই ইতিহাসের কার্নিশেই নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচে ২০ কোটি বাঙালি এবং আগামীতেও বাঙালি বেঁচে থাকবে তার এই ঋদ্ধ ইতিহাসের করতলে। যদি কোনােদিন এই ইতিহাসের সত্যপথ থেকে তার পদত্মলন ঘটে- সেদিনই নিঃশেষ হবে বাঙালি; তাই একাত্তরের দিনগুলি’ আমাদের পথপ্রদর্শক, আমাদের অনুপ্রেরণার আকাশ।
◼️স্মৃতিচারণ-
▪️১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর প্রথম সন্তান রুমী যােগদান করেন। রুমী ও তাঁর সহযােদ্ধাদের বিভিন্ন অপারেশনে জাহানারা ইমাম সহযােগিতা করেন। এছাড়া মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয়, খাদ্যের জোগান, গাড়িতে অস্ত্র আনা-নেওয়া এবং তা যুদ্ধক্ষেত্রে পৌছে দেওয়া, খবর আদান-প্রদান ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে তিনি সর্বান্তকরণে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের শেষদিকে রুমী শহিদ হন। জাহানারা ইমাম হন আমাদের শহিদ জননী।
লেখক জাহানারা ইমাম পরিচিতি-
জাহানারা ইমাম ১৯২৯ সালের ৩রা মে মুর্শিদাবাদের সুন্দরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল আলী। তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। জাহানারা ইমাম ১৯৪৭ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবাের্ন কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এড ও বাংলায় এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অধ্যাপনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের ওপর স্মৃতিচারণমূলক তাঁর অসাধারণ গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি সর্বত্র সমাদৃত। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ হলাে : গজকচ্ছপ, সাতটি তারার ঝিকিমিকি, ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস, প্রবাসের দিনগুলি ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। একাত্তরের ঘাতক, দালাল, রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের শান্তির দাবিতে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। ১৯৯৪ সালের ২৬শে জুন এই মহীয়সী নারী পরলােকগমন করেন।
Ekattorer Dinguli Jahanara Imam Pdf free Download link: click here