বাংলাদেশ রক্তের ঋণ Pdf Download
বইয়ের নাম: বাংলাদেশ রক্তের ঋণ
লেখকের নাম: অ্যান্থনি মাসকারেনহাস
অনুবাদক: মোহাম্মদ শাহজাহান
প্রকাশনী: হাক্কানী পাবলিশার্স
ক্যাটাগরি: অনুবাদ বই
ধরণ: বিদেশিদের চোখে মুক্তিযুদ্ধ
ফাইল টাইপ: Pdf (পিডিএফ)
file Size:- 11MB
বাংলাদেশ রক্তের ঋণ বই রিভিউ:
অ্যান্থনী ম্যাসকার্ণহাস সাংবাদিকতার জগতে আন্তর্জাতিকভাবে একজন বরেণ্য ব্যক্তিত্বের নাম। তাঁর সৃষ্ট বাংলাদেশ: লেগ্যাসি অব ব্লাড’ এরই এক প্রকৃষ্ট প্রমাণ। তিনি আজ ইহজগতে নেই ঠিকই, কিন্তু তাঁর এই সৃষ্টি তাঁকে ইতিহাস-পিপাসু মানুষের মনে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল।
মান্যবর প্রকাশকের সঙ্গে তার ছিলাে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। জীবদ্দশায় তিনি বইটিকে বাংলায় ভাষান্তরিত দেখার জন্যে প্রকাশকের কাছে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তার সেই সাধ পূরণ না হতেই তিনি নিয়তির অমােঘ নির্দেশে পাড়ি জমালেন অনন্তের পথে।
মরণের পরপারে বলেও তাঁর বিদেহী আত্মা আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসে কিছুটা হলেও পরিতৃপ্তি পাবে বলে আমার বিশ্বাস। বইটি বহু তথ্য সমৃদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল। এই সকল তথ্যের কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি যেন না ঘটে, ভাষান্তরের সময় সেদিকে সযত্নে নজর রাখা হয়েছে।
অ্যান্থনী সাহেবের কথাগুলােই আমি আমার ভাষায় ব্যক্ত করতে চেষ্টা করেছি। তবে, অনুবাদ। ভাষান্তর করতে গিয়ে বইটির কোন অধ্যায়েরই আসল রস এবং সুরের যেন একটুও পরিবর্তন না ঘটে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে।
বইটিতে ব্যবহৃত অনেক ইংরেজী শব্দ, নাম ইত্যাদিকে আক্ষরিক অর্থে অনুবাদ না করে, বইটির সহজবােধ্যতা এবং গতি ঠিক রাখার জন্যে সেগুলাের ইংরেজী উচ্চারণকেই বাংলায় লিখে দেয়া হয়েছে। বইটির অনুবাদ করার সকল প্রয়াসে আমি ব্যক্তিগতভাবে জনাব এ. কে. এম. শফিকুল ইসলামের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি আমার এ কাজে সক্রিয় সহযােগিতা এবং প্রচুর।
অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আমার এ অনুবাদটি যদি পাঠকের একটুও তৃপ্তি দিতে পারে, আমি আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করবাে।
মােহাম্মদ শাহজাহান।
শেখ মুজিব আর মেজরবৃন্দ দেশের জন্যে আমি যা করছি, কেউ তা অনুধাবন করলাে না।
—শেখ মুজিবুর রহমান
আমি ১৫ তারিখে তা ঘটাতে যাচ্ছি। মুজিবকে আমি চিরতরে সরিয়ে দিচ্ছি।
মেজর ফারুক রহমান
১৯৭৫ সালের ১২ই আগস্ট। রাত হয়ে এসেছে। মেজর ফারুক তখন বেঙ্গল ল্যান্ডার্সএর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। ঢাকা গলফ ক্লাবে সেদিন এক আঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান মেজর ফারুক ও তার তরুণী সুন্দরী স্ত্রী ফরিদার তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের (পার্টি) আয়ােজন। আপ্যায়িত শ’খানেক অতিথির কারও এ অনুষ্ঠান ভুলে যাবার কথা নয়।
ফারুক আর ফরিদা একটি অতি জনপ্রিয় তরুণ দম্পতি। দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত, বিত্তশালী ও সভ্রান্ত পরিবারবর্গের সঙ্গে তাদের রয়েছে নিবিড় বন্ধন। ঐ সকল পরিবারের সদস্যরাই দখল করে আছেন সরকারী আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আর উচ্চ আদালতের বিচারকের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ।
সুতরাং তাদের এ পার্টি ছিল সামাজিক ঘটনাপ্রবাহের একটা অংশ বিশেষ। স্বর্গলােকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত ছিল আয়ােজনের জৌলুস। কয়েক সপ্তাহ ধরে মৌসুমী বৃষ্টিতে সমস্ত শহরটি একেবারে সঁাতস্যাতে হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ঐদিন চমৎকার সূর্যালােকের পর সুন্দর মনােরম মেঘমুক্ত রাতের আকাশ বিরাজ করছিল।
ফারুকের পূর্বপুরুষও সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তাই পার্টিটি ছিল সামরিক ঐতিহ্যে বলীয়ান। ডজন খানেক নিয়ন রঙ্গীন বাতি লনের উপর সবরতের গ্লাস হাতে দলে দলে জমাট বাধা অতিথিদের মাথার উপরে যেন এক চাঁদোয়ার সৃষ্টি করেছিল।
সেনাবাহিনী সদর দফতরের ব্যান্ডে সঙ্গীতের মূছনায় আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছিল। ক্লাব ঘরের ভেতরে প্রীতিভােজের টেবিলগুলােতে প্রভূতভাবে সাজানাে ছিল-খাসির মাংসের বিরিয়ানী, কাবাব, মাংসের তরকারী/রিজালা আর পরিমাণমত ফলের সালাদ।
ফারুকের মামা জেনারেল স্টাফ প্রধান ব্রিগেডিয়ার খালেদ মােশাররফও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মিলিটারী সেক্রেটারী, ব্রিগেডিয়ার মাসহুরুল হক। ফারুকের জোয়ানেরা দম্পতির জন্যে উপহার হিসেবে নিয়ে আসে বেডরুমের জন্যে পাটের তন্তুজাত এক চমৎকার গালিচা।
বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে আসে টেবিল ল্যাম্প, কারুকাজ করা পাত্র, হরেক রকম রঙ্গিন কাগজে মােড়া নগরীর অভিজাত বিপণীকেন্দ্রগুলাে থেকে বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী। ব্রিগেডিয়ার হক এসেছিলেন শেষের দিকে। শেষে এলেও তিনি উপস্থিত সকলকে ছাড়িয়ে গেলেন।
তিনি সঙ্গে এনেছিলেন ‘গণভবন’ (শেখ মুজিবের সরকারী বাসভবন)-এর প্রধান মালীর তৈরী মৌসুমী ফুলের এক বিরাট তােড়া। তিনি ফুলের তােড়াটি ফরিদাকে উপহার দিয়ে বাজিমাত করে দেন।
তিনদিন পর উপস্থিত সকলেই হয়তাে রাতের ঘটনা প্রবাহ থেকে কোন সূত্র খুঁজেপাবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পেলেন না কিছুই। এদিকে ব্রিগেডিয়ার হক নীরবে হয়তাে তার বীরত্বের জন্যে তার ভাগ্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে থাকবেন। সেদিন ফরিদার জন্য আনীত ফুলের তােড়াটি হয়তাে তার জীবন বাঁচিয়েছিল।
কিন্তু ঐ উৎসবের রাতে ফারুকের মনের গােপন চক্রান্তটি সম্বন্ধে কেউ একটু আন্দাজও করতে পারেননি। তার মনে পড়ছে, তিনি সেদিন অস্বাভাবিকভাবে প্রাণখােলা ছিলেন। “আমি আমার স্বয়ংক্রিয় স্লাইড প্রজেক্টরটি মাত্র ৩,৫০০/- টাকায় বিক্রি করে ঐ পার্টিতে সমুদয় টাকা উড়িয়ে দিয়েছিলাম, তার জন্যে একটি ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করছিল।
তিনি যে কর্মে মনস্থির করে ফেলেছিলেন, তাতে হয় তিনি ফায়ারিং স্কোয়াডে যাবেন, না হয় অমােচনীয়ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর নাম অক্ষয় করে রাখবেন। আমি অনুষ্ঠানটা উপভােগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ঐটিই আমার জীবনের শেষ অনুষ্ঠান হতে পারত।
অতিথিদের সবাই চলে গেলে, পারিবারিক ছােট একটি দল লনে কফির সঙ্গে সামান্য নাস্তা নিয়ে আলাপচারিতার জন্যে মিলিত হলাে। আপ্যায়নকারীরা অতিথি সেবায় এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, নিজেদের খাবারের সুযােগও হয়ে উঠেনি।
দম্পতিটির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, ফারুকের মা-বাবা, চট্টলা থেকে আগত ফরিদার মা এবং ফরিদার বড় বােন জোবায়দা (ডাকনাম টি)। আরও ছিলেন, জোবায়দার স্বামী, মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ ঢাকায় অবস্থিত ২য় ফিল্ড আর্টিলারীর অধিনায়ক।
ফারুক তার ভায়রাভাইকে একদিকে সরিয়ে নিয়ে এলেন। তিনি রশিদকে জানালেন, ‘আমি ১৫ তারিখেই তা ঘটাতে যাচ্ছি; শুক্রবার সকালেই আমি মুজিবকে জীবনের তরে সরিয়ে দিচ্ছি।’
রশিদ চমকে উঠলেন। সচকিতে রশিদ একবার চতুর্দিকে দেখে নিলেন, কেউ তাে আবার ফারুকের গর্জন শুনে ফেলেনি! হঠাৎ যেন গােপন ষড়যন্ত্রের মাসগুলি উপসংহারের দ্বারপ্রান্তে এসে উপনীত হলাে। কিন্তু রশিদ প্রস্তুত ছিলেন না।
অনেকক্ষণ চুপ থেকে ফিস ফিস করে তিনি বললেন, “তুমি কি পাগল হয়েছাে?” এত তড়িঘড়িতে সব পন্ড হতে পারে। আমাদের তাে সাথী অফিসার নেই । অস্ত্রশস্ত্রও নেই । আমরা কিভাবে তা সফল করব? তেজোদ্দীপ্ত শানিত চোখে ফারুক অন্য মেজরটির দিকে তাকিয়ে বললেন, “এটাই আমার সিদ্ধান্ত” রণ কৌশলের পরিকল্পনা আমার কাছে তৈরী করা আছে।
আমি একা হয়ে গেলেও এগিয়ে যাব। তুমি ইচ্ছে করলে সরে দাঁড়াতে পার। তবে জেনে রেখাে, ‘আমি ব্যর্থ হলে শাসকচক্র তােমাকেও ফাঁসিতে লটকাবে।’ আবারও রশিদ অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন। মনে হচ্ছিল তিনি ফারুকের কথাগুলাে হজম করছেন।
অবশেষে হালকা-পাতলা, দীর্ঘদেহী আর্টিলারী অফিসার সােজা হয়ে দাঁড়িয়ে ফারুককে বললেন, “ঠিক আছে! যদি করতেই হয়, তবে কর । কিন্তু আমাদের এ নিয়ে আরও আলােচনা প্রয়ােজন। আরও কিছু অফিসার আমাদের সঙ্গে রাখা উচিত।”
শহরের অন্য প্রান্তে শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার-এর লােকজন নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডস্থ তার নিজ বাড়ীতে নিশ্চিন্তে সময় কাটাচ্ছিলেন। ঐ বাড়ীটি তখনও দেশবাসীর চিন্তা-ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। শেখ মুজিবের ছােট বােনের মেয়ের বিবাহ উপলক্ষে জ্ঞাতি-গােষ্ঠীর সকলে দু’দিন আগেই এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন।
তাদের অনেকেই তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন ও মহান নেতার আশীর্বাদ-এর জন্যে রয়ে গিয়েছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হলে বেগম মুজিব ভদ্রভাবে তাদেরকে বিদায় দেন। অবশেষে কতিপয় বাছাই করা লােক শেখ মুজিবের সান্নিধ্যে থেকে যান।
অন্যান্যের মধ্যে মুজিবের প্রিয় বােনের স্বামী, আবদুর রব সেরনিয়াবাত উপস্থিত ছিলেন। তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন, মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়ােজিত ছিলেন। আর একজন ছিলেন সেরনিয়াবাত-এর ছেলে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি তিনদিন পরে অলৌকিকভাবে পারিবারিক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন ।
ঐ রাত্রের পারিবারিক আলাপচারিতা সরকারী বিষয়াদিকেও সমভাবে প্রভাবান্বিত করা বিচিত্র কিছুই ছিল না। শেখ মুজিব এ দু’টিকে কখনও আলাদা করে দেখেননি। তাঁর সন্দেহ আর চক্রান্তের জগতেও তার প্রিয়তম ও নিকটতম লােকজন অনায়াসে বিশ্বাসের স্থান দখল করে বসেছিল। বাকি বিস্তারিত পড়ুন…
bangladesh rokter rin pdf free ebook link: