Screenshot 09 07 2023 20.47.12
|

তোমার নামে সন্ধ্যা নামে সাদাত হোসেন Pdf eBook (full)

বইয়ের নাম: তোমার নামে সন্ধ্যা নামে

লেখক: সাদাত হোসেন

১ম প্রকাশ: বইমেলা ২০২১ সাল

ক্যাটাগরি: উপন্যাস

ফাইল ফরম্যাট: Pdf (পিডিএফ)

প্রকাশনী: Anyaprokash

Status: coming soon

 

তোমার নামে সন্ধ্যা নামে – সাদাত হোসেনের ২০২১ সালের নতুন বই Pdf ebook

তোমার নামে সন্ধ্যা নামে Pdf download by সাদাত হোসেন

 

বই রিভিউ:

পরদিন থেকে রিহার্সেলে যাওয়া বন্ধ করে দিলো নদী। সারাটা রাত ঘুমাতে পারলো না সে। রাগে, ক্ষোভে, অপমানে যেন ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছিলো তার। সে আশুতোশ পালকে ফোন দিয়ে বললো এই নাটক আর করবে না।

তবে ঘটনার দিনকয়েক পর এক ভোরে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে হঠাৎ চমকে গেলো নদী! গেটের সামনে হাতে আঁকা বিশাল একটা ছবি। ছবিটা তার। ভোরের ওই স্নিগ্ধ নরম আলোয় নদী মুগ্ধ হয়ে ছবিটার তাকিয়ে রইলো।

ছবিতে রিহার্সেলের ফাঁকে ক্লান্ত নদীকে বিশ্রাম নিতে দেখা যাচ্ছে। সে বসে আছে একা, আনমনা। কোথা থেকে একটা অদ্ভুত নরম আলো এসে পড়েছে তার কপালের কাছে। সেখানে একগোছা এলোমেলো চুল। সে আঙুলের ডগায়  চুলগুলো সরানোর চেষ্টা করছে। তার চোখে গাঢ় কাজল। কেমন আড় চোখে তাকানো দৃষ্টি। নাকের কাছে বিন্দুবিন্দু ঘাম জমে আছে। টিপটা সামান্য বাঁকা। বাসন্তি রঙা শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে কোমরের কাছে বাঁধা। গলায় সরু একটা চেইন। চেইনটা ঢেউয়ের মতো বেঁকে আছে ঘর্মাক্ত বুকের কাছে।

কী অসাধারণ ডিটেলস! নিজের ছবি দেখে নিজেরই প্রায় দমবন্ধ হয়ে এলো নদীর।  আসলেই কী এতো সুন্দর সে!

নদী আশেপাশে তাকালো। কাউকে দেখতে পেলো না। তবে ছবিটার সাথে ছোট্ট একটা কাগজ। কাগজটা খুলতেই দেখলো সজলের নিজের ক্যারিকেচার। সে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

ছবির নিচে লেখা, ‘আপনার অভিনয় খারাপ এটা সত্যি। আপনি অসম্ভব রূপবতী এটাও সত্যি। এবং আমি সরি এটাও সত্যি। জানেনতো, জগতে তিন সত্যির ওপরে কিছু নেই? কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখানে সত্যি হচ্ছে চারটা। আর চতুর্থ সত্যিটাই সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। সেই সত্যিটা হচ্ছে, আপনার কারণে পরদিন সবার সামনে এভাবে আমাকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।’

কতবড় সাহস ছেলেটার, এতোকিছুর পরও আবার প্রথম কথাটা লিখেছে সে! নদীর মনে হলো প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো অনেক চেষ্টা করেও রাগটা ঠিক জমাতে পারলো না সে। প্রথমে খানিক হয়েছিলো সত্যি, কিন্তু সময় যত যাচ্ছিলো, ততই সেই রাগটা গলে যেন জল হয়ে যাচ্ছিলো। এই নিয়ে নিজের ওপর প্রচন্ড বিরক্তও লাগতে লাগলো তার।

সারাদিন শুটিংয়েও যেন ঠিকঠাক মনোযোগ বসাতে পারলো না। বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো, বাসায় ফিরেই ছবিটা দেখতে চায় সে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নদীর বিষ্ময়ের তখনো অনেক কিছুই বাকী ছিলো। পরপর চারদিন বাসা থেকে বের হতে গিয়ে আরো চারটা ছবি পেলো সে। প্রতিটি ছবিই তার রিহার্সেলের। এবং ছবিগুলো এতো জীবন্ত! এতো ডিটেইল!

ভীষণ অবাক হলো নদী। অথচ ছেলেটার ভাব দেখে মনে হতো, তারদিকে কখনো ভুলেও ফিরে তাকায়নি সে! সামান্য গ্রাহ্যও করেনি। অথচ এখনতো মনে হচ্ছে, সারাটাক্ষণ কেবল তাকেই দেখতো সে। না হলে প্রতিটা দিনের এমন ডিটেইল ছবি আঁকা অসম্ভব!

পঞ্চম দিন অবশ্য নদীর মন খারাপ হয়ে গেলো। সে বের হতে গিয়ে দেখলো গেটে কিছু নেই। খানিক থমকে দাঁড়ালো সে, একটু আগেই বেরিয়ে পড়েনি তো? তার কি আরো খানিক পরে বের হওয়া উচিত ছিল? কিন্তু ঘড়ি দেখে নদী নিশ্চিত হলো, প্রতিদিন সে এই সময়েই বের হতো।

তাহলে?

সেই সারাটাদিন খুব অস্থির হয়ে রইলো নদী। রইলো পরের কয়েকটা দিনও। চাইলেই সজলের নম্বর যোগাড় করে ফোন করা যায়। কিন্তু তা সে চায় না। এই ছেলে বিপজ্জনক। এর থেকে সাবধান থাকতে হবে। কিন্তু নদী সাবধান থাকতে পারে না। কারণে অকারণে, সময়ে-অসময়ে এই ছেলে তার মাথায় উঁকি দিয়ে যায়।

নদীর সন্দেহ মাথা থেকে ক্রমেই সে মনেও নেমে আসছে। এটা ভয়ঙ্কর। খুবই ভয়ঙ্কর! এই ভুল করতে দেয়া যাবে না।

কিন্তু প্রেমে পড়ার ভুল কি কেউ এড়াতে পারে? জগতের সকল হিসেব নিকেশ সেখানে নিমেষেই নিষ্ফলা হয়ে যায়।

নদীরও হলো।

অষ্টম দিন সকালে বের হতে গিয়ে সে দেখলো একটা ধবধবে সাদা ক্যানভাস। সেখানে কিচ্ছু নেই। কেবল ক্যানভাসের ওপর সুন্দর করে লেখা, ‘নিশ্চয়ই মন খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কী করবো বলুন? টাকা ফুরিয়ে গেছে। আর আজকাল বাজারের যা অবস্থা! রঙ আর তুলির দাম যেন ছবির শিল্পমূল্যের চেয়েও বেশি!’

নদী জানে না কেনো, সেই প্রথম তার মনে হলো এই ছেলেটার সাথে সে কথা বলতে চায়। অনেক অনেক গল্প করতে চায়। খুনসুঁটি, ঝগড়া করতে চায়। সে তাকে যতই বলুক তার অভিনয় কিচ্ছু হয় না, তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না।

কিন্তু কীভাবে কথা বলা শুরু করবে সে?
যে ঠোঁটকাটা ছেলে, কখন কী বলে বসে তার ঠিক নেই।

নদী তারপরও সজলের নম্বর সংগ্রহ করলো। তারপর খুব ভেবেচিন্তে তাকে মেসেজ পাঠালো, ‘আপনি যে আপনার ছবিগুলোর দাম চাইছেন, সেটা স্পষ্ট করে বললেই হতো। অতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলারতো কিছু ছিলো না। ছবির দাম কতো বলুন। আর কীভাবে টাকা পাঠাতে হবে তাও’।

মেসেজ পাঠানোর পর থেকে প্রবল অস্থিরতায় সময় কাটতে লাগলো তার। কী রিপ্লাই করবে সজল? সজল অবশ্য সেই রাতে রিপ্লাই করলো না।

সারারাত একটা ভয়াবহ অস্বস্তি নিয়ে কাটলো নদীর। ভোররাতের দিকে একটু চোখ লেগে এসেছিলো তার। জানালা গলে ভোরের আলো আসতেই চোখ মেলে তাকালো। ফোনের স্ক্রিনে সজলের মেসেজ। সে মেসেজটা পড়লো।

সজল লিখেছে, ‘টিভিতে অভিনয় করলেই যে পণ্যমূল্য আর শিল্পমূল্যের পার্থক্য বোঝা যাবে না, এমনতো কোনো কথা নেই! ওখানে ছবির মূল্যের কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছে ছবির শিল্পমূল্যের কথা। তো শিল্পির শিল্পমূল্য সম্পর্কে ধারণা আছেতো?’

নদী এবার আর দমে গেলো না। সে লিখলো, ‘যেই শিল্পি মনে করে শিল্পের শিল্পমূল্যের তুলনায় রঙতুলির দাম বেশি, তার সম্পর্কে অন্যরা আর কী ভাববে বলুন?’

দুজনের এই বার্তাযুদ্ধ চলতেই থাকলো। আর তার আড়ালে হয়তো জমতে থাকলো সম্প্রীতির গল্পও। নদী একদিন হুট করেই আশুতোশ পালকে ফোন করে বললো, সে আবার রিহার্সেলে যাবে। পরদিনই সজলের সাথে দেখা হয়ে গেলো তার। তবে সজল যথারীতি দূরে বসে রইলো। আশুতোশ পাল এসে এসে সজলকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেলেন নদীর সামনে। তারপর বললেন, ‘সরি বলো। কোনো তর্ক না, স্ট্রেট সরি বলো। তোমার কারণে নাটকটা এতোদিন পিছিয়ে গেলো’।

সজলকে অবশ্য সরি বলতে হলো না। তবে সে নিজ থেকেই সেদিন রিহার্সেল শেষে নদীর কাছে এলো। তারপর দীর্ঘসময় চুপচাপ বসে রইলো। বাইরে তখন বৃষ্টি হচ্ছিলো। ওই চুপচাপ বৃষ্টিস্নাত দীর্ঘ সময়টুকুতে কী ছিলো কে জানে!

নদী হঠাৎ বললো, ‘রাত হয়ে যাচ্ছে, আমি ফিরবো কী করে?’

সজল বললো, ‘আমি পৌঁছে দেই?’

‘আপনি কেনো পৌঁছে দিবেন?’

‘ওই যে সরিটাও যে বলতে হয়নি তার ঋণ শোধ হিসেবে’।

নদী খানিক চুপ করে থেকে বললো, ‘আর ছবির মূল্য শোধ? ওটাওতো ঋণই নাকি?’

সজল আচমকা বললো, ‘সব ঋণ শোধ করতে নেই। কিছু ঋণ ইচ্ছে করেই সারাজীবন রেখে দিতে হয়। বারবার চাওয়া যাবে বলে’।

ওই ছোট্ট একটুকু কথা, ‘সব ঋণ শোধ করতে নেই। কিছু ঋণ সারাজীবন রেখে দিতে হয়। বারবার চাওয়া যাবে বলে’।

ওই কথাটুকু মাথায় গেঁথে রইলো নদীর। হয়তো মাথা থেকে টুপ করে নেমে এলো মনেও…

~ ‘তোমার নামে সন্ধ্যা নামে’, বইমেলা ২০২১ এর উপন্যাস। আসছে Anyaprokash থেকে।

tomar name sondha name sadat hossen pdf ebook link: here

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *