জোছনা ও জননীর গল্প pdf (eBook) হুমায়ূন আহমেদ
বুক রিভিউ
বইয়ের নামঃ জোছনা ও জননীর গল্প
লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ
প্রকাশনীঃ অন্য প্রকাশ
পত্র সংখ্যাঃ ৫২৮ পেজ
জোছনা ও জননীর গল্প price: ৫৬০ টাকা (৩০-৪০% বিডি বুক স্টোর)
জোছনা ও জননীর গল্প রিভিউ
মুক্তিযুদ্ধ যদি এক বীরত্বের নাম হয় তবে সেই বীরত্বকে ধারণ করা অতিব জরুরি। কিন্তু কোন বিষয়কে ধারণ করতে হলে বিষয়টি সম্পর্কে অবাদ জ্ঞান, ধারণ থাকা প্রয়োজন। যা একমাত্র বই অথবা কোন বীর সন্তানের মুখ থেকেই জানা সম্ভব। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে যাচ্ছে হয়তো আর কয়েক বছর পর জাতির কোন বীর সন্তানকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু চির যৌবনা বই ঠিকই থাকবে। জোছনা ও জননীর গল্প নামক বইটি সেই বীরত্বের গল্পকে টিকিয়ে রাখার অনেক নামের মধ্যে একটি ল নাম।
বরাবরের মত গম্ভীর, উদাসীন চরিত্রের সাবলীল বর্ণনায় গুরুত্বপূর্ণ, হৃদয় স্পর্শ করা কোন বার্তাকে লেখকের তুলে ধরার গুণটা এই বইটিতেও প্রতীয়মান হয়েছে। দীর্ঘ সময় নিয়ে লেখা এই বইটির বর্ণনার কোথাও কোন তাড়াহুড়ো ছিল না। এজন্যই হয়তো মুক্তিযুদ্ধকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখাতে বইটি অতুলনীয়। অনিশ্চয়তার প্রতিটি মূহুর্তে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার বদলে দেশেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ার যে মানসিকতা ১৬ ই ডিসেম্বরকে নিজেদের করে নিতে সাহায্য করছে সেই মানসিকতা সম্পূর্ণ মানুষদের মাহাত্ম্য বইটি যেন বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। শুধু অস্ত্র কাঁধে দিয়ে যুদ্ধ নয় মানসিক ভাবে সাহায্য করার গুণটিও যেন সেই মুহুর্তে অতি আবশ্যক ছিল। জাতীয় শান্তি রক্ষায় যারা ব্যক্তি শান্তিকে বর্জন করেছে গল্পের ছলে তাদের ভালবাসার মুহূর্ত গুলো উপন্যাসটিতে প্রথমিক ভাবে রসের সৃষ্টি করলেও পরক্ষণেই মনে করে দিয়েছে হারানের বেদনার কথা। হুমায়ুন আহমেদ মনে হয় এখানেই সফল….
জোছনা ও জননীর গল্প উক্তি:
বহু সংখ্যক চরিত্রের সমন্বয় রচিত বইটিতেন রয়েছে বাস্তব নানা চরিত্র, ঘটনার সমাহার। লেখকের নিজ পরিবারের বর্ণনাও রয়েছে বইটিতে। যুদ্ধকে নিজ চোখে দেখা অনেক মানুষের মধ্যে লেখক নিজেও ছিলেন বলেই হয়তো বইটিতে নানা বর্ণনা হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়। নব দম্পতি নাইমুল, মরিয়ম কিংবা ভালবাসায় ঘনীভূত শাহেদ, আসমানীর মেয়ে রুণিকে ঘিরে ছোট সংসার যুদ্ধের আগ মুহূর্ত থেকে ২৫ মার্চের দূর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে লেখকের পরিবারের ছুটাছুটির মধ্যমে যেন মুক্তিযুদ্ধকে চোখের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। অনিশ্চতার মধ্যে দিয়ে ২৫ শে মার্চের পর থেকে কারফিউ জারি থাকা ঢাকা শহরের অবস্থার বর্ণনা যেন অনুধাবন করাটাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। কারফিউ তুলে দেওয়ার মুহুর্ত টুকু পেয়ে যেন প্রতিটি মানুষ নিজের প্রাণ ফিরে পেয়ে আত্মীয়, স্বজনের খুঁজ করেছেন। এ যেন এক ধূসর মরুর বুকে একটা ফোঁটা পানির জন্য ছুটাছুটি। মূদ্রার উল্টো পিঠও রয়েছে সবাই যে কষ্ট করেছে তাও না!! অনেকেই সুবিধাও নিয়েছে, মাসুমার স্বামী কলিমুল্লাহ তাদেরই একজন। যুদ্ধ যেন তার আয়ের উৎসকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। এখানও রয়েছে বৈচিত্র্যতা অনেকেই ছিলেন যারা হয়তো না বুঝে শান্তি কমিটিতে নাম লিখিয়েছিলেন কিন্তু মনকে মানাতে না পেরে সংগ্রামী হয়ে মৌখিক প্রতিবাদ করায় নদীর পাড়ে লাশ হয়ে পরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু তাতেও যেন ছিল এক পরম সুখ, দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার নাম থেকে নিজের নাম বাদ দেওয়ার সুখ। শাহেদের বড় ভাই ইরতাজউদ্দিন ছিলেন তেমনি এক চরিত্র। ডাকাত সর্দার হারুন মাঝি, মধুর মত চরিত্র বৈচিত্র্যতা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটি স্তরের দৃষ্টি ভঙ্গি তুলে ধরার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় হয়তো উপন্যাসটি প্রাণ দিয়েছে কয়েক গুণ। তবে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কাদেরীয়া বাহিনী, হেমায়েত বাহিনীর সাহসীকতার বর্ণনাও রক্তে আগুন ধরার মত। যে বর্ণনাগুলো পড়লে মনে হয়, ”
উক্তিটি মনে হয় পৃথিবীর আর কোন জাতি নয় একমাত্র বাঙ্গালি জাতির জন্যই উক্তিটি সত্যি।
শুরুর দিকের প্রতিটি ঘটনার বর্ণনা চরিত্রের বাঁকে বাঁকে সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধকে অনুধাবন করার যে চেষ্টা লেখকের ছিল তা যেন উপন্যাসের শেষের দিকে এসে কিছুটা ব্যাহত হয়েছি কিংবা মনে হয় ঐ সময়ে সকল ঘটনা খুবই দ্রুতই ঘটে যাচ্ছিল। হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের যে মুহুর্তে তুলে ধরা হয়েছে তাতে খুব একটা প্রাণ দিতে পারে নি বর্ণনাগুলো।
তবে বলতে দ্বিধা নেয়, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধা থেকে শুরু করে ঐ সময়টাতে আতংকিত একটা জাতি তথা আমার পূর্বপুরুষদের আবেগ-ভালবাসা, দুঃখ- বেদনা, পাওয়া-হারানোকে আজ নতুন করে অনুধাবন করতে পেরেছি। জাতির স্বাধীনতার ৫০ বছরে পর আজকের এরকম সুন্দর একটি মুহুর্তে হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য লেখকের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
pdf link
Humayun Ahmed Josna o jononir golpo pdf link: click here