স্বপ্ন ও কল্পনায় মেশা এই ইছামতী নদী। বিভূতিভূষণও এই নদীর কাকচক্ষু জলে স্নান করতে করতে বোধ করি সেই স্বপ্নই দেখেছিলেন-স্নিগ্ধ শান্ত স্বপ্নিল নদী যার দুই কূল আচ্ছন্ন করে থাকত বাঁশ-ঝাড় আর অসংখ্য পত্রবহুল ছায়া-ঘন গাছপালা। সেই স্বপ্নেরই ফসল ইছামতী উপন্যাস। Ichhamati pdf by Bibhutibhushan Bandyopadhyay book info:
প্রকাশনা ও প্রকাশকালঃ ১৯৫০ সালের ১৫ জানুয়ারি মিত্রালয় প্রকাশনী থেকে প্রথমবার প্রকাশিত হয়।
প্রকাশনী: অবসর প্রকাশনী।
ধরনঃ চিরায়ত উপন্যাস
মূল্য: ৮০টাকা।
প্রথম অবসর প্রকাশ:১৯৯৬
ইছামতি উপন্যাসের বিষয়বস্তু
ইছামতি উপন্যাসের আলোচনা:
প্রকৃতির মায়ার জড়ানো কি চমৎকার একটা বই! শহুরে আমাদের কাছে উত্তাল ইছামতী নদী, “তিত্তিরাজ গাছের ঘন জঙ্গল”, “ঝিনুক রাশির উপর ঝরে পড়া রাধালতার হলুদ রঙের ফুল” এর থেকে হয়ত ধূমকেতুতে আকাশযানের অবতরণ কল্পনা করা সহজ, কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমী যে কারো কাছেই বিভুতিভূষণের বইয়ের আবেদন কমার কথা না একটুও। নীলকুঠির অত্যাচারে দিশেহারা একটি গ্রামের গল্প এই ইছামতী। নীলকুঠির গল্প বলতে গিয়ে লেখক প্রকৃতির কথা আর স্বপ্ন দেখার কথা বলতে ভুলেননি।
বিভুতিভূষণের সব লেখাতেই ঘুরেফিরে আসে পৃথিবীটাকে চষে দেখার অদম্য ইচ্ছার কথা। এ উপন্যাসেও কয়েকবার করে ঘুরেফিরে আসে সংসারী মানুষের কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকার কথা, “পাহাড় কাকে বলে তাই দ্যাখলাম না জীবনে বাবাজি, তায় আবার ঝরণা!”, “পড়ে আছি গু-গোবরের গর্তে, আর দেখিচি কিছু”। সেইসাথে নিস্তারিণী আর গয়া দুইজন প্রথাবিরোধী সাহসী মেয়ে অনেকদিন মনে রাখার মত চরিত্র।
বিভূতিভূষণের বই স্বপ্ন দেখাতে শেখায়, তাই মনে হয় পড়তে এত ভালো লাগে।
ইছামতি উপন্যাসের চরিত্র
চরিত্রমালাঃ
ভবানী বাড়ুয্যে,তিলু,খোকা,দেওয়ান রাজারাম,লাট শিপ্টন সাহেব,কবিরাজ, মোহনলালসহ আরও অনেকে।
বইঃ ইছামতী
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিশেষ অর্জনঃ
ইছামতী বিভূতিভূষণের লিখিত ও প্রকাশিত সর্বশেষ উপন্যাস। এ উপন্যাসের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন।
ইছামতী উপন্যাসের প্রশ্ন উত্তর: ইছামতী উপন্যাসের নামকরণ
কাহিনী সংক্ষেপঃ
উনিশ শতকে নীল বিদ্রোহের পটভূমিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উথান- পতনের মর্মান্তিক বর্ণনাই এ উপন্যাসের মূল উপজীব্য। ইছামতীর তীরে পাঁচপোতা নামে একটি গ্রাম। সেখানে বাস করেন দেওয়ান রাজারাম, তার নিঃসন্তান স্ত্রী ও অনূঢ়া তিন বোন তিলু,বিলু ও নিলু। কুলীনদের জাতপাত বাচাতে গিয়ে তিন বোনকে যথাসময়ে বিয়ে দিতে পারেননি রাজারাম।শেষমেশ, ভবানী বাড়ুয্যের মত ন্যায়পরায়ণ ও সৎ ব্যক্তিকে পেয়ে তিন বোনকেই তার হাতে সঁপে দেন।রাজারাম চাকরি করতেন ইংরেজ লাট শিপ্টনের অধীনে।
শিপ্টনের অত্যাচারে গ্রামবাসী বিপর্যস্ত। চারদিকে হাহাকার।আর এসবে সাহাযা করতো দেওয়ান রাজারাম ও ভজা মুচীর মত ইংরেজদের পা চাটা দেশীয় দালাল ও দোষররা।ভবানী বাড়ুয্যে ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিহলেও তিনি স্ত্রীদের স্বাধীনতার বিষয়ে কার্পণ্য করেননি। তার স্ত্রীদের ঘোমটা ছাড়া চলা,লেখাপড়া শেখানো,সাঁতার কাটা কোনটাতেই বাঁধ সাজেননি তিনি।গ্রামের একজন অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন রামকানাই কবিরাজ।তার ন্যায়পরায়ণতা ও আত্মসম্মান ছিল উল্লেখযোগ্য। উপন্যাস জুড়ে ভবানী বাড়ুয্যে ও তার স্ত্রীদের কথোপকথনের মাধ্যমে পাচপোতা গ্রামে ইংরেজদের শোষন,গ্রামের মানুষের কুসংস্কার, বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ্যদের পরনিন্দা চর্চাসহ গ্রামের সামগ্রিক জীবনযাপন পদ্ধতি এভাবেই চিত্রিত হয়েছে।
উপন্যাসের শেষে দেখা যায় নীলকরদের অত্যাচার শেষ হচ্ছে।গ্রামের ছেলেরা কলকাতায় পাড়ি জমাচ্ছে পড়াশোনার জন্য। ইংরেজরা কুঠি বিক্রি করে চলে গেল।আর সেই কুঠি কিনে নিলো একদম জিরো থেকে হিরো হওয়া শুদ্র শ্রেণির নব্য ধনী লালমোহন পাল।যে কিনা একদিন শিপ্টন সাহেবের চাবুকের ভয়ে রাস্তায় মালপত্র ফেলে পালিয়েছিলো।এভাবে নতুন দিনের নতুন সূর্য দেখার আবহ তৈরী করে গেছেন লেখক।
সত্য উন্মোচনঃ
উপন্যাসের শেষে লেখক মূল চরিত্র ভবানী বাড়ুয্যের মুখ দিয়ে জীবনের গভীর উপলব্ধি ব্যক্ত করানোর মাধ্যমে জীবনের সত্যিকার সত্য উন্মোচন করেন।
‘ইছামতী’ উপন্যাস দুটি কে কে লিখেছেন? ১৯৫০ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস, বিভূতিভূষণ এর লেখা শেষ সম্পূর্ণ উপন্যাস.
সেখানেই আবর্জনা। আত্মা সেখানে মলিন। চৈতন্যদেব কি সাধে রঘুনাথ দাসকে উপদেশ দিয়েছিলেন, ‘ভালো নাহি খাবে আর ভালো নাহি পরিবে!’আমার খোকা যদি বাঁচে, সে অন্যভাবে জীবনযাপন করবে। নির্লোভ হবে। সরল, ধার্মিক, সত্যপরায়ণ হবে। যদি সে ভগবানকে জানতে চায়, তবে সরলতা ও দীনতার মধ্যে ওকে জীবনযাপন করতে হবে। মলিন বিষয়াসক্ত মনে ভগবদ্দর্শন হয় না। আমি ওকে সেইভাবে মানুষ করবো।”