পুতুল নাচের ইতিকথা PDF মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (eBook)

বইয়ের নাম : পুতুল নাচের ইতিকথা
লেখকের নাম : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
ক্যাটাগরি: অনুবাদ বই, উপন্যাস, manik bandopadhyay books
ফাইল ফরম্যাট: Pdf

“পুতুল নাচের ইতিকথা” আমার হাতে প্রথম আসে ২০০৯ সালে। উপন্যাসটি শেষ করার পর অামি দুই দিন ভবঘুরের মত ঘুরতে থাকি। উপন্যাসটি অামায় যেন স্থানচ্যুত করে। দশ বছর পর পুনরায় যখন পড়া শুরু করি অাবারো মিশে যাই শশী ও কুমুদে এবং কুসুম-মতি যেন অাশ্রয় নেয় কল্পনায়!

উপন্যাসের শুরু হারুঘোষের বজ্রাঘাতে অপমৃত্যুর ঘটনা এবং তালপুকুরে মাটির টিলার ওপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দর্শনে শশীর অতৃপ্তির মাধ্যমে সমাপ্তি। এরই মধ্যে দশবছর কালব্যাপী গাওদিয়া গ্রামের সাধারণ মানুষের নিয়তির প্রতি অাত্মসমর্পণ এবং কার্যকরণ বাস্তবতায় নাটকীয়তার সন্নিবেশ ঘটেছে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় “পুতুল নাচের ইতিকথা’য়  হৃদয়ের ভাবাবেগের চেয়ে বিজ্ঞানমনস্ক এবং যুক্তি দিয়ে খণ্ডানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। গাওদিয়া গ্রামের ভূগোল বাংলার চিরায়ত গ্রামের পরিচয় বহন। গাওদিয়া গ্রামে জমিদার শ্রেণি রয়েছে,রয়েছে সামন্তবাদ, দালালী-মহাজনী এবং দরিদ্র শ্রেণি। তবে ঔপনিবেশিক শাসনের জমিদারী ও সামন্তবাদের পরিচয় খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না। মূলত উপন্যাসের আখ্যান নরনারীর জটিল মনস্তত্ত্ব, ঘরকুনো জীবন, অন্ধকারাচ্ছন্ন দরিদ্র গ্রামীণ জীবন,সূর্যবিজ্ঞানে বিশ্বাস এবং কু-সংস্কারের ওপর নির্মিত।

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র শশী ডাক্তারকে ঘিরে কাহিনি অাবর্তিত। অর্ন্তজগত এবং বর্হিজগতের দ্বন্দ্ব, চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণে ক্ষতবিক্ষত এবং শেকড়ের সুতোয় বাঁধা শশীর জীবন পাঠককূলে সহমর্মিতা পেলেও কুসুমের প্রেমে অক্ষমতা প্রকাশ, পিতা গোপালের সামন্তবাদী চিন্তাধারায় কুঠারাঘাত করতে না পারা, জীবনকে উপভোগ করার অাক্ষেপ, যাদব পণ্ডিতের স্বেচ্ছায় মৃত্যু রহস্য প্রকাশ করতে না পেরে নিরব সাক্ষী থাকা; তার চরিত্র পুরোপুরি মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি।

কুসুম পরানের বৌ। উচ্ছল গ্রাম্য অবোধ অশিক্ষিত বধু কুসুম সাত বছর শশীর প্রেমে কাঙাল হয়ে নিজেকে নিবেদন করে অথচ কুসুমের অাবেদনে শশী প্রশ্রয় দিলেও অাহ্বানকে সচেতনভাবে অবজ্ঞা করে যায়।
কুসুম যখন বলে, “অাপনার কাছে দাঁড়ালে অামার শরীর এমন করে কেন,ছোটবাবু?”
তখন শশী বলে, “শশীর! শরীর! তোমার মন নাই,কুসুম।”

কুসুম শশীর মাঝে উত্তাপ খোঁজে কিন্তু শশী জেনেও নির্বিকার অথচ শশী কুসুমের উচ্ছলতায় টান অনুভব করে, হাসিতে দুর্বল হয় এবং কুসুম তার ভাবনাকে অান্দোলিত করে। শশী কুসুমকে খুব করে পেতেও চায় না অাবার হারাতেও বেদনা অনুভব করে। অাসলে তৎকালীন সমাজ বাস্তবতায় এই অসম প্রেমকে লেখকের স্থায়ী রূপদান সম্ভব ছিল না। নয় বছর অপেক্ষার পর নিস্তেজ কুসুম যখন গাওদিয়া ছেড়ে চিরতরে বাপের বাড়ি যাওয়ার মনোনিবেশ করে তখন কুসুমের জন্য শশী ব্যাকুল হয়ে পড়ে। শশী কুসুমকে অাহ্বান করে, “অামার সঙ্গে চলে যাবে বৌ?”

কিন্তু কুসুম প্রত্যাখ্যান করে বলে, “চিরদিন কি একরকম যায়? মানুষ কি লোহার গড়া যে চিরকাল একরকম থাকবে,বদলাবে না? অাজ হাত ধরে টানলেও যাবোনা।”
পরক্ষণে আবার বলে, “লাল তকতকে তাতানো লোহা ফেলে রাখলেও তাও অাস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয়ে যায়,যায় না?”

উপন্যাসের বিভিন্ন ঘটনা নিয়তি নির্ভর মনে হলেও অাদতে লেখক কার্যকরণ বাস্তবতার উপর বেশি নির্ভর করেছেন। বিন্দুর ট্রাজেডি নিয়তি নয় লৌকিক, যাদবের স্বেচ্ছা মৃত্যুও লৌকিক এবং মতি – কুমুদের জীবনকে উপভোগের বোহেমিয়ান জীবনও নিয়তির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কার্যকরণ বাস্তবতা নির্দেশ করে। মতি ও কুমুদের প্রেম-অগোছালো জীবন, অনিশ্চিত ভবিষ্যতে পথচলার মাঝে বোহেমিয়ান জীবনকে উপভোগ করার বাসনা পাঠকের হৃদয়কে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।

“পুতুল নাচের ইতিকথা”য় অাদতে পুতুল নাচের কোন কাহিনি নেই। মানুষের জীবন যেন পুতুলের মত। মানুষ নিজেই যেন পুতুল হয়ে নাচে অাবার নিজেই সুতো টেনে ধরে রাখে। অাবার কেউ যেন অাড়ালে কলকাঠি নাড়ে। এক্ষেত্রে শশীকে কুসুমের বাবার উক্তি প্রণিধানযোগ্য,
“সংসারে মানুষ চায় এক অার হয় অার এক, চিরকাল এমনি দেখে অাসছি ডাক্তার বাবু। পুতুল বৈ তো নয় আমরা, একজন অাড়ালে বসে খেলাচ্ছেন।”

শশী পিষ্ট হয় ভেতর ও বাহিরের দ্বন্দ্বে। একাকীত্ব শশীকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। গাওদিয়া ছেড়ে শশী চলে যেতে চাই বিলেত অথচ শশী যেতে পারে না, সে যেন সমাজ ও শৃঙ্খলের সুতোয় বাঁধা। কুসুমকে নিয়ে সে বাঁচতে চাই, গৎবাঁধা জীবনকে ঝেড়ে ফেলে সে চাই উপভোগ করতে অথচ তার ইচ্ছে বাস্তবে রূপায়িত হয় না। সমাজ ও সংস্কারের কাছে অসহায় অাত্মসমর্পনে শশী যেন পুতুল হয়ে থাকে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৩৭টি উপন্যাসের মধ্যে “পুতুল নাচের ইতিকথা” সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। উপন্যাসটিতে তিনি বিজ্ঞান ও যুক্তির যে কাঁচি চালিয়েছেন তা বাংলা সাহিত্যে নতুনত্বের স্বাদ এনে দেয়।

পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাস pdf (eBook) ডাউনলোড: click here