শঙ্খচূড় সাদাত হোসেন PDF Download (বই)
ভালোবাসা এমন কেন? কেন কেউ বুকের ভেতর এমন আলগোছে চুপিচুপি শেকড় গজিয়ে ফেলে? আর সেই শেকড় উপড়ে ফেলতে গেলেই ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বুকের জমিন। ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে হৃদয়ভূমি। এ কেমন অনুভব?
`বেশিরভাগ মানুষের ঔদ্ধত্য কোথা থেকে তৈরি হয় জানো?’
‘কোথা থেকে?’
‘নিজের নির্বুদ্ধিতা আর অন্যের বিনয় থেকে।’
‘মানে?’
‘মানে বুদ্ধিমান মানুষ উদ্ধত হয় না। উদ্ধত হয় নির্বোধ লোক। বেশিরভাগ নির্বোধই অন্যের বিনয়কে দুর্বলতা ভাবে। আর কাউকে দুর্বল ভাবা মাত্রই সে হয়ে ওঠে উদ্ধত। আর উদ্ধত মানুষ মাত্রই নিজেকে অতি-আত্মবিশ্বাসী এবং অতিসক্ষম মনে করা শুরু করে। সমস্যা হচ্ছে, এটি তার ভেতরে অবচেতনেই অন্যের সক্ষমতা সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়। আর ভুল যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন পতন অনিবার্য।’
বই এর বিবরণ
book | শঙ্খচূড় |
Author | সাদাত হোসাইন |
Publisher | অন্যপ্রকাশ |
format | |
Edition | 1st Published, 2020 |
Number of Pages | 96 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
বুক রিভিউ বা বইয়ের কিছু অংশ
‘পৃথিবীতে কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো?’
‘সম্ভবত বাবাকে।’
‘সম্ভবত কেন?’
‘কারণ, আপনি।’
‘আমি!’ অবাক কণ্ঠে বললেন রত্নেশ্বর ঠাকুর।
‘হুম।’
‘কেন?’
‘বাবার সম্পর্কে আপনি এমন কিছু কথা আমাকে বলেছিলেন যে সেগুলো এর আগে কেউ কখনো আমায় বলেনি। এখন মনে হচ্ছে, তিনি বাবা হিসেবে একরকম, মানুষ হিসেবে অন্যরকম…।’
অরুণ কথা শেষ করল না। রত্নেশ্বর ঠাকুর বললেন, ‘পৃথিবীর সব বাবারাই অপরাধ করেন।’
‘কিন্তু এটাতো সাধারণ কোনো অপরাধ নয়।’
‘তোমার বাবাওতো সাধারণ কেউ নন। তিনি রাজা। আর জগতের সব রাজা ও রাজবাড়ির গল্প এমনই।’
‘আমি যদি রাজা হই আমার গল্পও এমন হবে? এমন কিছু থাকবে?’
‘হুম, থাকবে।’
‘কিন্তু আপনি যে আমায় ভালো মানুষ হতে বলেন? ভালো মানুষ কি ভালো রাজা হতে পারে না?’
‘রাজা যদি মানুষ থাকেন, তাহলে পারেন।’
‘রাজারা কি তবে মানুষ থাকেন না?’
‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই না।’
‘কেন?’
‘কারণ মানুষ যখন রাজা হয়, তখন তার ভেতরের মানুষটা ধীরে ধীরে পালিয়ে যেতে থাকে।’
‘কেন? পালিয়ে যেতে থাকে কেন?’
‘ভয়ে।’
‘কীসের ভয়ে?’
‘ক্ষমতার ভয়ে।’
‘ক্ষমতার ভয়ে!’ অবাক গলায় বলল অরুণ।
‘হুম। ক্ষমতার চেয়ে ভয়ানক আর কিছু নেই। স্রষ্টা মানুষকে এতো ক্ষমতা দিয়েও কিছু ক্ষমতা তার কাছে রেখে দিয়েছেন। নানারকম অসামর্থ্যতা, সীমাবদ্ধতা দিয়ে খানিক দুর্বল করে রেখেছেন মানুষকে। কেন জানো?’
‘কেন?’
‘যাতে সে নত থাকে। ভীত ও প্রীত থাকে। কিন্তু ক্ষমতা পাওয়া মাত্রই মানুষের ভীতি ও প্রীতি কমতে থাকে। সে তখন সবকিছু জয় করতে চায়। পেতে চায়। কিন্তু সেই পাওয়ার কিছুই সে প্রীতি দিয়ে পেতে চায় না। চায় ভীতি দিয়ে পেতে।’
অরুণ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। আচ্ছা, এই মানুষটার সঙ্গে কি তার আবার দেখা হবে? কথাটা বলল সে। রত্নেশ্বর বললেন, ‘হবে।’
‘সত্যি?’
‘সত্যি।’ বলে সামান্য হাসলেন তিনি। তারপর বললেন, ‘বাবাকে ভালোবাসায় দোষ নেই। তিনি অশুদ্ধ হলেও না। আসলে অশুদ্ধ বলে কাউকে ভালোবাসা যাবে না, এই ভাবনাটিই ঠিক নয়। জগতে পরিপূর্ণ শুদ্ধ মানুষ বলতে তো কেউ নেই। তাই অশুদ্ধকে ভালোবেসে তাকে শুদ্ধ করে তুলতে হবে। সেটিই বরং সত্যিকারের ভালোবাসা। সুতরাং তোমার বাবা যদি ভয়ানক অপরাধীও হন, তাকে ভালোবাসায় কোনে অপরাধ নেই।’
অরুণ কথা বলল না। তবে সে এই মানুষটিকে অবাক চোখে দেখে। তার কথা শোনে। মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। শেষ কয়েক বছরে কত কত গল্প, ভাবনা, দর্শন যে সে এই মানুষটির কাছ থেকে শুনেছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু তারপরও সারাক্ষণ কী এক অদ্ভুত তেষ্টা অনুভব করে সে।
রত্নেশ্বর বললেন, ‘আর যুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার তলোয়ার নয়। বুদ্ধি। কিন্তু বেশিরভাগ যোদ্ধাই কেবল অস্ত্র চালাতে জানে, বুদ্ধি নয়। ফলে তারা অনর্থক যুদ্ধ এড়াতে জানে না। কিন্তু যে যোদ্ধা সহসা যুদ্ধে জড়ায় না, একান্ত বাধ্য না হলে যুদ্ধ করে না, তার চেয়ে বড় যোদ্ধা আর নেই। কথাটি মনে রেখো।’
অরুণ খাপমুক্ত তলোয়ারটা আরেকবার দেখল, সকালের সূর্যের ঝলমলে আলোয় তলোয়ারখানা যেন গনগনে আগুনে ঝলসে উঠল। সে লাফিয়ে ঘোড়ায় উঠল।
সমুখে যুদ্ধ সমাগত…
Shongkocur Sadat Sadat Hossain PDF Download link:- শঙ্খচূড় সাদাত হোসেন PDF