গল্পগুলো অন্যরকম pdf ebook By Arif Azad
Golpogulo onnorokom Arif Azad pdf
বই: গল্পগুলো অন্যরকম
লেখক: আরিফ আজাদ
ক্যাটাগরি: ইসলামি গল্প
প্রকাশক: সমকালীন প্রকাশন
১ম প্রকাশ: ২০১৯
লেখক: আরিফ আজাদ
ক্যাটাগরি: ইসলামি গল্প
প্রকাশক: সমকালীন প্রকাশন
১ম প্রকাশ: ২০১৯
গল্পগুলো অন্যরকম আরিফ আজাদ pdf book রিভিউ:
লেখক আরিফ আজাদের লেখনি অসাধারণ। তার সম্পর্কে জানতে নিচের একটা পোস্টই যথেষ্ট।
আমি উনার টপ একজন ফ্যান বলতে পারেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি,২০২০ বইমেলায় এসে তিনি লিখেছেন-
আজকের সারা সন্ধ্যা কেটেছে বইমেলায়। মাগরিবের সালাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে যখন এসে পৌঁছাই, তখন দিনের আলো প্রায় নিভু নিভু। হুতুম পেঁচার চোখের মতো জ্বলে উঠতে শুরু করেছে সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্টগুলো। সেই আলোতে কেউ ছুটে আসছে মসজিদ পানে, কেউবা অন্যদিকে। চারদিকে হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচি। হর্ণের শব্দে কান ঝালাপালা করে দিয়ে গাড়িগুলো ছুটছে দ্বিগবিদিক।
২৭ ফেব্রুয়ারি,২০২০ বইমেলায় এসে তিনি লিখেছেন-
আজকের সারা সন্ধ্যা কেটেছে বইমেলায়। মাগরিবের সালাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে যখন এসে পৌঁছাই, তখন দিনের আলো প্রায় নিভু নিভু। হুতুম পেঁচার চোখের মতো জ্বলে উঠতে শুরু করেছে সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্টগুলো। সেই আলোতে কেউ ছুটে আসছে মসজিদ পানে, কেউবা অন্যদিকে। চারদিকে হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচি। হর্ণের শব্দে কান ঝালাপালা করে দিয়ে গাড়িগুলো ছুটছে দ্বিগবিদিক।
প্রথম রাক’আতেই ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করলেন সূরা ইনফিতারের কিছু আয়াত। সুরেলা কন্ঠে তিনি যখন ‘ইন্নাল আবরা-রা লাফী না’ঈম’ (নিশ্চয় সৎ কর্মশীলরা সেদিন থাকবে অনাবিল সুখ আর স্বাচ্ছন্দ্যে) বলে খানিক দম নিলেন, আমার তখন মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। নিজের আদি এবং আসল গন্তব্যের কথা আরেকবার মনে পড়ে যাওয়ায় আমি খুবই উৎফুল্ল। এরপর তিনি যখন ‘ওয়া ইন্নাল ফুজ্জা-রা লাফী জাহীম (আর নিশ্চয়, অন্যায়কারীরা সেদিন থাকবে প্রজ্জ্বলিত আগুনে) বলে থামলেন, আমার গত দু’দিনের মন খারাপ তখন একটু প্রশমিত হলো। আজকে দিল্লীতে আমাদের ভাইদের ওপরে যে অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছ, যেভাবে মুসলিমদের ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে ছাঁই করা হচ্ছে, আমি যেন দিব্য দৃষ্টিতে তাদের শাস্তিগুলোকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। সেদিনের লেলিহান আগুনে তারা জ্বলেপুড়ে খাক হচ্ছে- এই দৃশ্য আমার ক্রোধের আগুনে খানিকটা প্রশান্তির প্রলেপ দিলো।
মসজিদ থেকে বেরুতেই আমার শ্বশুরের ফোন পাই। ফোন ধরতেই ও’পাশ থেকে তিনি বললেন, ‘বাপজান, কই আছো তুমি?’
উত্তরটা পাশ কাটিয়ে গেলাম। পাশ কাটানোর কারণ, উনার সাথে মেলায় ঘুরাঘুরি করাটা আমার পক্ষে সম্ভব না। যেখানে সেখানে যদি আমাকে ‘আরিফ’ বলে সম্বোধন করে বসে, আর পাশ থেকে কেউ যদি সন্দেহের বশে এসে জিজ্ঞেস করে, ‘ভাই আপনিই কি আরিফ আজাদ?’, আমি বেচারা তখন উভয় সঙ্কটে গিয়ে পড়বো৷ তারচে ভালো শ্বশুর সঙ্গ ত্যাগ করে নিজের মতো একা একাই ঘুরে বেড়ানো।
উত্তরটা পাশ কাটিয়ে গেলাম। পাশ কাটানোর কারণ, উনার সাথে মেলায় ঘুরাঘুরি করাটা আমার পক্ষে সম্ভব না। যেখানে সেখানে যদি আমাকে ‘আরিফ’ বলে সম্বোধন করে বসে, আর পাশ থেকে কেউ যদি সন্দেহের বশে এসে জিজ্ঞেস করে, ‘ভাই আপনিই কি আরিফ আজাদ?’, আমি বেচারা তখন উভয় সঙ্কটে গিয়ে পড়বো৷ তারচে ভালো শ্বশুর সঙ্গ ত্যাগ করে নিজের মতো একা একাই ঘুরে বেড়ানো।
বললাম, ‘বাবা, আপনি কোথায় আছেন তাই বলেন’।
– ‘এই যে মেলায়। ঘুরতেছি। তোমার স্টলে গেলাম, বুঝছো? চরম ভিড়’।
– ‘এই যে মেলায়। ঘুরতেছি। তোমার স্টলে গেলাম, বুঝছো? চরম ভিড়’।
golpogulo onnoroko
আমি না বোঝার ভান করে বললাম, ‘ও’।
সালাত শেষ করে এসে দাঁড়ালাম বাংলা একাডেমির স্টলের সামনে। দুয়েকটা বই নেড়েচেড়ে দেখলাম। একটুপরে, দুজন ছেলে আসলো আমার পাশে। একজন একটা বই খুলে অন্যজনের দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে, আর অন্যজন সেই হাসি হাসি মুখখানাকে ক্যামেরাবন্দী করে ফেললো মুহূর্তেই। ছবি তোলা শেষ হওয়া মাত্র তারা দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করলো। আজকেই সম্ভবত ওই ছবিটা জুকারবার্গের ফেইসবুকে আপলোড হবে গুরুগম্ভীর কোন ক্যাপশান সহ। ছেলেটাকে নিশ্চয় তুখোড় পড়ুয়া পড়ুয়া মনে হবে ওই ছবিতে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম চর্চাগ্রন্থ প্রকাশের স্টলের দিকে। মানুষ বলে বেড়ায়, এই স্টলে নাকি উপচে পড়া ভিড় থাকে। লোকমুখে যা উড়ে বেড়ায়, তা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করার এই মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করার লোভ সামলাই কি করে? এসে দেখি কথাটা খুব একটা মিথ্যে৷ নয়৷ স্টলটার চারপাশে অনেকগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সেই মানুষগুলোর পেছনে আরো মানুষ। দেখে সর্বপ্রথম শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম আল্লাহর। এই অধমের কাজগুলোকে মানুষের কাছে তিনি যেভাবে অকাতরে পৌঁছে দিচ্ছেন, তার শুকরিয়া কি একজীবনে শেষ করা যায়?
চর্চাগ্রন্থের সামনে অবশ্য বেশিক্ষণ দাঁড়াইনি। তখন একবার মনে হলো, এই যে নিভৃতে কাজ করি, কেউ চেনেনা-জানেনা, তারও একটা আলাদা মজা আছে। মানুষ কতো আগ্রহভরে আমার বই কিনছে, অথচ পাশে আমি দাঁড়িয়ে আছি, তা কেউ জানেনা। যখন পাশ থেকে কেউ একজন ঠেলে বলে যায়, ‘ভাই সরেন তো, যাইতে দেন’, তখন খুবই আনন্দ হয়। কাজ করতে পারার আনন্দ। আলহামদুলিল্লাহ।
ঘুরতে ঘুরতে অন্য একটা স্টলে এসে দাঁড়ালাম। বই দেখছি উল্টেপাল্টে। আমার ঠিক পেছনে একজন তরুণী, আর দুজন ছেলে কথা বলছে। আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি তাদের আলাপন। মেয়েটা বলছে, ‘এবারও বই মেলায় সাজিদ বেস্টসেলার। রকমারির তালিকা দেখেই তো বোঝা যায়’।
গল্পগুলো অন্যরকম-
আমি বুঝতে পারলাম, মেয়েটা হয়তো ‘আরিফ আজাদ’ বেস্টসেলার বলতে চাইছে, কিন্তু তার মনে গেঁথে আছে সাজিদের নামটাই। তাই সে বলছে, ‘সাজিদ’ই বেস্টসেলার। কথাটা শুনে আমার মনটা আরেকবার আনন্দে নেচে উঠলো। এটাও বোধকরি একজন লেখকের সার্থকতা। আলহামদুলিল্লাহ।
আমি বুঝতে পারলাম, মেয়েটা হয়তো ‘আরিফ আজাদ’ বেস্টসেলার বলতে চাইছে, কিন্তু তার মনে গেঁথে আছে সাজিদের নামটাই। তাই সে বলছে, ‘সাজিদ’ই বেস্টসেলার। কথাটা শুনে আমার মনটা আরেকবার আনন্দে নেচে উঠলো। এটাও বোধকরি একজন লেখকের সার্থকতা। আলহামদুলিল্লাহ।
তিন কপি ‘বেলা ফুরাবার আগে’ স্টল থেকে নেবো ভেবেছিলাম, কিন্তু যোগাযোগ করে জানলাম, বই নাকি সন্ধ্যা সাতটায় স্টক আউট। নিজের বইটা নিজেই পেলাম না- এটাকে কি আপসোস বলবো? নাকি, মধুর বিড়ম্বনা?
লিটলম্যাগ চত্ত্বরের পাশে দেখলাম চা বিক্রি হচ্ছে। এককাপ চা নিয়ে বসে পড়লাম ঘাসের ওপর। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে লাগলাম আমার লেখক হয়ে উঠার গল্পটা। যেদিন আমি সাজিদের একেবারে শুরুর গল্পটা লিখি, সেদিন আকাশভরা জোসনা ছিলো। নিতান্ত খেয়ালের বশে লিখেছিলাম। সেদিনের সেই আলো ঝলমলে রাতটা আমার জীবনে এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তা কি তখন ভাবতে পেরেছিলাম? আমরা যে আগেভাগে তাকদির জানতে পারিনা, তারও একটা মজা আছে, রহস্য আছে। মানুষ যদি তার তাকদির সম্পর্কে জেনে যেতো, তাহলে তার জীবনটা হয়ে উঠতো পানসে, নীরস আর অর্থহীন। আজ থেকে চারবছর আগেই যদি আমি জেনে যেতাম যে, আজকের সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে আমি এরকম সুখ সাগরে ভাসবো, তাহলে আজকের আনন্দটা কি আমার মাঝে কাজ করতো?
সবকিছুর জন্য মহান রবের কাছে হাজারকোটি শুকরিয়া। আলহামদুলিল্লাহ।