তিনটি সেনা অভ্যুত্থান Pdf এম এ হামিদ পিএসসি
বইয়ের নাম: তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা
লেখক: লে. কর্ণেল (অব:) এম এ হামিদ পিএসসি
পাবলিকেশন্স: হাওলাদার প্রকাশনী
ক্যাটাগরি: স্বাধীনতা উত্তর ইতিহাস
ফাইল ফরম্যাট: Pdf (পিডিএফ)
আরো দেখুন: আমার দেখা ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ‘৯৬ বইটি Bangla book pdf সহ।
তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা book review:
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েও আজ কেমন জানি পরাধীন। তাও নিজ জাতীর শোষকের হাতে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সালে ঘটে যাওয়াতিনটি সামরিক অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা। যার জের এখন কমবেশি চলমান। এখনও তর্কবিতর্ক চলে সেই সময়কার ঘটনাবলি নিয়ে। লেখালেখিও হয়েছে কম না।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ তেমন একটাপাওয়া যায় না। আমার প্রয়াত স্বামী লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল হামিদ পি.এস.সি. সে সময় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ‘স্টেশন কমান্ডার’ থাকার সুবাদে অত্যন্ত কাছে থেকে এই ঐতিহাসিক ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করেন।
তাঁর ঐ প্রত্যক্ষঅভিজ্ঞতাই পরবর্তীতে তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা’ নামে লিপিবদ্ধ করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। বইটি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয় একাধিক মুদ্রণ ও পাইরেসিই তারপ্রমাণ।
বইটি অনেকদিন থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। আবার নতুন করে বইটি প্রকাশ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন ‘হাওলাদার প্রকাশনীর তরুণ প্রকাশক মােহাম্মদ মাকসুদ। তাঁকে এই বইটির মুদ্রণ, প্রকাশন ও বিপণনের অনুমতি প্রদান করলাম।
বিস্তারিত:
ইচ্ছা করে ১৯৭৫ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সংঘটিত হয়েছিল তিন তিনটি ভয়াবহ সেনা-অভ্যুত্থান। তিনটি অভ্যুত্থানই যুগান্তকারী ঘটনা, শতাব্দীর অন্যতম ঐতিহাসিক ঘটনা, যেগুলাের।মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিমণ্ডলে ঘটে ব্যাপক উত্থান-পতন। এমন কি সরকার পরিবর্তনের মতাে অবিশ্বাস্য ঘটনাও ঘটে যায় ।
সৌভাগ্যবশতঃ তিনটি ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানই অতি নিকট থেকে দেখার সুযােগ আমার হয়েছিল। প্রায় প্রতিটি ঘটনার সাথে কমবেশি প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষভাবে সংযুক্ত।ছিলাম । অন্যেরা যেখানে শুনে শুনে লিখেছেন, আমি সেখানে নিজে প্রত্যক্ষ করে লিখছি।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু লেখক অভ্যুত্থান ঘটনাগুলাে ঘটনা না দেখেই শুধু শুনে শুনেই রং চং দিয়ে বিভিন্নভাবে অতিরঞ্জিত করে গল্পাকারে অলংকরণ করে লিখেছেন। এতে প্রকৃত তথ্য বিকৃত হয়েছে। তাগিদ থাকা সত্ত্বেও এতদিন ইচ্ছা করে অভ্যুত্থানগুলাের ওপর বিস্তারিত কিছুলিখিনি।
এর কারণ ছিল প্রথমতঃ সেনা অভুত্থান ঘটনাগুলাে খুবই Sensitive, দ্বিতীয়তঃ ঘটনাগুলাের সাথে আমারই বহু সিনিয়র সহকর্মী, বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তি জড়িত থাকায় একান্তইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব নিয়ে কিছু লিখতে চাইনি। গত বছর ‘আজকের কাগজ পত্রিকায় তিনটি অভ্যুত্থানের উপর আমার কিছুপ্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সেগুলাে সর্বস্তরের পাঠক সমাজে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করে । তখন থেকে বন্ধু-বান্ধব, সুধীমহল আমাকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে অভ্যুত্থানগুলাের উপর একটি বই লেখার তাগিদ দিতে থাকেন। বস্তুত তাদের তাগিদেই আমি এই বই লেখারকাজে হাত দেই ।
১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর, ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানগুলাের উপর আমার লেখার সুবিধাহলাে, ঐ সময় সৌভাগ্যক্রমে আমি ঢাকার স্টেশন কমান্ডার হিসেবে অত্যন্ত কাছে থেকে ঐতিহাসিক অ্যুত্থানগুলাে প্রত্যক্ষ করার সুযােগ আমার হয়েছিল।
এছাড়া অভ্যুত্থানের প্রধান নায়কদের প্রায় সবার সাথে ছিল আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ও সরাসরি জানাশােনা। অভ্যুত্থানের সর্বাধিক আলােচিত নায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন আমার কোর্স-মেট। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে আমরা দুই বছর একসাথে ক্যাডেট হিসাবে অধ্যয়ন করি।
সে ছিল আমার বন্ধু। তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল ‘তুই তুকারের’ । তাই আমার আলােচ্য বইতে অনেক সময় তুমি’ সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে; বস্তুত এটাই ছিল আমাদের স্বাভাবিক সম্পর্ক। তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেকের ইর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বন্ধু হলেও বহুক্ষেত্রে তার ও আমার মত ও নীতির মিল ছিল।
বিভিন্ন ব্যাপারে ঝগড়াঝাটি এমনকি গালাগালি চলতাে। দুঃখের বিষয় স্বার্থান্বেষীপ্রভাবশালী একটি মহলের প্ররােচনায় অভ্যুত্থানের সময়কালে লগ এরিয়া কমান্ডারথাকাকালীন সময় তার সাথে সিরিয়াস ভুল বােঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। যার ফলে হঠাৎ করেইআমি স্বেচ্ছায় সমম্মানে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে বেরিয়ে আসি।
বরাবরই জিয়া ছিল মেজাজী এবং প্রবল আত্মসম্মানবােধ সম্পন্ন একজন সৎ ওসচেতন অফিসার। কিন্তু সে অসৎ অফিসারদের কানে ধরে কাজ করাতে সুবিধা হয় বলেমনে করতাে। তার সাথে জেঃ ওসমানী, মােশতাক আহমদ, জেঃ খলিল প্রমুখদের বনিবনানা থাকা সত্ত্বেও যেভাবে সবার সাথে একা লড়ে ফাইট করে উপরে উঠে আসে, তা ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার, লিডারশীপ কোয়ালিটির এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
জেনারেল এরশাদ প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলেন একজন অখ্যাত দুর্বল প্রকৃতির অফিসার।কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই ছিলেন একমাত্র অফিসার, যার দুর্বলতাই হয়েদাঁড়ায় তার উর্ধ্বে ওঠার বড় প্লাস পয়েন্ট। তিনি কোহাটের অফিসার ট্রেনিং স্কুল থেকে পাশ করা একজন ‘অনিয়মিত অফিসার ছিলেন, বহু পরে নিয়মিত হন।
জেঃ এরশাদ ও আমি একসাথে ১৯৬৭ সালে কোয়েটার স্টাফ কলেজ কোর্স করি। দক্ষ স্মার্ট অফিসার হলেও তার চারিত্রিক দুর্বলতার জন্য জাতিকে বহু মূল্য দিতে হয়। সেনা অভ্যুত্থানের অন্যতম ফসল জেনারেল এরশাদ, যিনি জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় তড়িৎ প্রমােশনপেয়ে হন জেনারেল এবং ডেপুটি চীফ অব স্টাফ । অতঃপর আকাশ হল তার সীমানা।
ব্রিগেডিয়ার খালেদ মােশাররফ ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ অফিসার। কথাবার্তায় চালচলনে রাজকীয় ব্যক্তিত্ব। আমার কিছু জুনিয়র থাকায় তার সাথে সম্পর্ক থাকলেও ততাে ঘনিষ্ঠতা ছিল না। অন্যান্যদের মতাে তিনিও ছিলেন উচ্চাকাঙ্খী, কিন্তু ভাগ্যলক্ষ্মীতার প্রতি সদয় ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের এক বীর সেনানায়ক খালেদ মােশাররফ, নেহাৎ দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে অকালে সৈনিকদের হাতে প্রাণ হারান।
জেনারেল শফিউল্লাহ নম্র, ভদ্র অফিসার, সেও আমার কোর্সমেট। অগাস্ট অভ্যুত্থানের আকস্মিক ঘটনাপ্রবাহ সামাল দিতে না পারায় সমালােচিত হন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী২৪ অগাস্ট ‘৭৫ তারিখে শফিউল্লাকে সরিয়ে তার স্থলে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানকরা হয়।
অগাস্ট অভ্যুত্থানের প্রধান নায়ক মেজর ফারুক ও মেজর রশিদ ছিল অনেক জুনিয়র অফিসার। তাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও সব সময় তারা আমাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছে। ফারুক রশিদই প্রকৃতপক্ষে জিয়াকে শুরুতে সেনাপ্রধানের গদীতে বসায়, কিন্তু পরে জিয়া তাদেরকে এড়িয়ে চলায় তাদের ক্ষোভের অন্ত ছিল না।
ফারুক খুবই স্মার্ট, প্রাণবন্ত, আবেগপ্রবণ অফিসার। রশিদ ছিল ধীরস্থির, শান্ত ও হিসেবী।কর্নেল তাহেরও ছিল আমার অনেক জুনিয়র, তাই সরাসরি তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তাহের ছিল একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযােদ্ধা অফিসার। ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর ও কর্নেল জিয়াউদ্দিনের সাথে ছিল ভালাে সম্পর্ক।
এ তিনজনই কমবেশী বামঘেঁষা হলেওতারা ছিল নীতিবান অফিসার। পরবর্তীতে জিয়ার সাথেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।শ্রেণীহীন সেনাবাহিনীর প্রবক্তা কর্নেল তাহেরই ছিলেন প্রকৃতপক্ষে নভেম্বর সেপাই বিপ্লবের প্রধান স্থপতি। কিন্তু জিয়ার সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরাজিত হয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে তাকে (2প্রাণ দিতে হয়।
৭ নভেম্বর সেপাই বিদ্রোহের দিনগুলােই ছিল সবচেয়ে কঠিন সময়। সেপাইদের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। তাদের দাপটে অফিসারদের পলায়ন ছিল অকল্পনাতীত ব্যাপার । এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। তিনটি অভ্যুত্থানের সময়ই আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই সপরিবারে অবস্থান করে অরাজক অবস্থা স্বচক্ষে অবলােকন করি।
ঘটনাগুলাে যেভাবে ঘটেছে এবং যেভাবে আমি প্রত্যক্ষ করেছি, সেভাবেই যথাযথ বর্ণনা দিয়েছি। তিনটি সেনা অভ্যুত্থানেরই বিভিন্ন দিক আমি আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতেসম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষণ করেছি। আমার পক্ষ থেকে সত্য উদ্ঘাটনের কোনােত্রুটি রাখিনি।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী, তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে সত্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেছি।
যারা সাক্ষাৎকার দিয়ে আমাকে সহযােগিতা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন জেনারেল শফিউল্লাহ, জেনারেল খলিলুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার আমিনুল হক, ব্রিগেডিয়ার খুরশিদ, কর্নেল মালেক, কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদ, মেজর বজলুল হুদা, লেঃ কর্নেল মহিউদ্দিন,।মেজর হাফিজ, কর্নেল মুনির, ব্রিগেডিয়ার হাবিবুর রহমান, মেজর কামরুল, ব্রিগেডিয়ার আতা, কর্নেল মান্নান, কর্নেল মতিন চৌধুরী, মেজর হাসমতউল্লাহ, জনাব সাইদুর রহমান, ডাঃ ফয়সল আহমেদ ও আরাে অনেকে।
তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে ফারুক, রশিদ ও হুদা দীর্ঘ সময় ব্যয় করে আমাকে বিস্তারিত সাক্ষাঙ্কার দেওয়ায় তাদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলছি, সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ঘটনাগুলাে পর্যালােচনা করেছি। সত্যের খাতিরে ঘটনাগুলাের যথার্থ বর্ণনা দিতে গিয়ে যদি কারাে পক্ষে বা বিপক্ষে গিয়ে থাকে, তাহলে তা ঘটেছে আমার একান্ত অনিচ্ছায় । তাই তাদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
পঁচাত্তরের তিনটি সেনা অভ্যুত্থানই রাজনৈতিক-সামরিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক ঘটনা। এগুলাে কেন সংঘটিত হলাে? কি অবস্থার প্রেক্ষিতে সংঘটিত হলাে? কেনইবা ব্যর্থ অথবা সফল হলাে? জাতি কি পেলাে এগুলাে থেকে!
তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা লে. কর্ণেল (অব:) এম এ হামিদ পিএসসি Pdf link: